নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ | প্রিন্ট
সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন কাঠামোয় বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে সরকার চাইছে আগামী সংসদ নির্বাচনের আগেই নতুন একটি বেতন কাঠামো দিতে। নতুন বেতন কাঠামোয় কোনোরকম বৈষম্য যাতে না থাকে সে বিষয়ে সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। ইতোমধ্যে অর্থ বিভাগকে এমন একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে সরকার বেতন বৈষম্য নিরসনে ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে। কমিটি গত দুই বছরে দৃশ্যমান তেমন কোনো কাজ করেনি। ফলে বৈষম্যও দূর করা সম্ভব হয়নি। এখন মেয়াদ শেষ হয়ে আসছে। তাই মূল্যস্ফীতির চাপ ও জীবনযাত্রার ব্যয় আমলে নিয়ে নির্বাচনের আগে সরকার নতুন একটি বেতন কাঠামো দিতে আগ্রহী।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের তৃতীয় মেয়াদের সময়সীমা শেষ হতে দুই বছরের মতো বাকি। সে হিসেবে আগামী বছরের শেষ দিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। নির্বাচনের আগে আবারও সব পক্ষকে অনুকূলে রাখতে চায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গত ১৩ বছরে টেকসই উন্নয়নে কতটা এগিয়েছে বাংলাদেশ এ নিয়ে সরকারের মধ্যে তৃপ্তির ঢেকুর থাকলেও সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান নিয়ে রয়েছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এমনিতেই টানা দুই বছরের করোনা মহামারিতে চাকরি হারিয়েছে বহু মানুষ। এ সময় আয় কমেছে প্রায় ৭০ ভাগ মানুষের। অন্যদিকে বাকি ৩০ ভাগের মধ্যে অন্তত ১০ ভাগের আয় বেড়েছে বহুগুণ। এতে দেশে আয় বৈষম্য তৈরি হয়েছে। যা নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবন-জীবিকা চরম সংকটের মুখে দাঁড় করিয়েছে। এরই মধ্যে সরকারি চাকুরেদের বেতন বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনায় এসেছে।
বেতন-ভাতা নিয়ে কাজ করেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের এমন একজন অতিরিক্ত সচিব এ প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে সাংবাদিকদের বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য যে পরিমাণ বেতন বাড়ানো হয়েছে তা আর কোনো সরকারের সময় হয়নি। এটা ঠিক, গত পাঁচ বছরে দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। একই সঙ্গে জিনিসপত্রের দামও বেড়েছে। তবে সরকার মনে করে মূল্যস্ফীতির চাপ সহনীয়ই রয়েছে, যদিও জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে। আর আয় বেড়েছে খুব কমসংখ্যক মানুষের। সরকারি চাকরিজীবীদের তো আয় খুবই সীমিত ও নির্ধারিত। এজন্য নতুন বেতন কাঠামো দরকার। তবে তা হবে কি না এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত নির্দেশনা আসেনি। আমরা আশা করব সরকার নির্বাচনের আগে একটা নতুন বেতন কাঠামো দেবে।
সূত্র জানান, মূল্যস্ফীতির চাপ, জীবনমানের উন্নয়ন ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির বিষয় বিবেচনায় নিয়ে সরকারি চাকুরেদের নতুন বেতন কাঠামো নিয়ে চিন্তা শুরু করেছে সরকার।
সর্বশেষ ২০১৫ সালে বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হয়েছিল যা এখন কার্যকর রয়েছে। সরকার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন জাতীয় নির্বাচনের আগেই নতুন বেতন কাঠামো দিয়ে সরকারি চাকুরেদের তুষ্ট রাখতে চায় সরকার। যা আওয়ামী লীগের জন্য ভোটসহায়ক উদ্দীপনা হয়ে উঠতে পারে।
জানা গেছে, এর আগে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য তিনটি ‘বিশেষ ইনক্রিমেন্ট’ ও ‘নবম বেতন কমিশন’ গঠনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আবেদন করে বাংলাদেশ সচিবালয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩ অক্টোবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ২৭ সেপ্টেম্বর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য তিনটি ‘বিশেষ ইনক্রিমেন্ট’ ও ‘নবম বেতন কমিশন’ গঠনের জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে আবেদন জমা দেয় বাংলাদেশ সচিবালয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা কল্যাণ সমিতি। তাদের দাবি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার তাদের জীবনযাত্রার মান, আয়-ব্যয়ের সংগতি, মুদ্রাস্ফীতিসহ অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয় বেতন কমিশন কার্যকরের এক বা দুই বছর আগে বিভিন্ন সময় মহার্ঘ্য ভাতা প্রদান করা হয়েছে।
সূত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন
Posted ৫:০২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২
শিক্ষার আলো ডট কম | শিক্ষার আলো