
অলোক আচার্য | রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১ | প্রিন্ট
করোনা ভাইরাসের মহামারীর কারণে শিক্ষা কার্যক্রম সবচেয়ে বেশি দীর্ঘসময় যাবৎ থমকে আছে। এই বিশাল ক্ষতি পুষিয়ে নিতে নানাভাবে চেষ্টা করা হচ্ছে। করোনাকালে কম বেশি সব শ্রেণিপেশার মানুষই সমস্যায় আছেন। বহু সংখ্যক মানুষের জীবন ও জীবিকার পরিবর্তন ঘটেছে। শিক্ষকরাও এর বাইরে নন। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় রয়েছেন কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক-কর্মচারী। স্কুল থেকে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন এসব শিক্ষক। বেতন নেই ফলে পরিবারের চাহিদা মেটানোর জন্য শিক্ষকতা ছেড়ে নানা পেশার সাথে যুক্ত হয়েছেন।
শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজ লাইক দিন ও ফলো করুন( ক্লিক করুন)।
বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশন এর হিসাব মতে, দেশে ৪০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে প্রায় ছয় লাখ শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। আর বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ঐক্য পরিষদের তথ্যানুযায়ী, দেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬০ হাজার। এসব প্রতিষ্ঠানে পৌনে এক কোটি শিশু পড়াশোনা করে। এই কিন্ডারগার্টেনগুলোর অধিকাংশই পরিচালিত হয় ভাড়া বাড়িতে। ফলে এই দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নিয়মিতভাবে ভাড়া পরিশোধ করতে না পারায় বাধ্য হয়েই বাসা ছেড়ে দিতে হয়েছে। প্রথম কয়েকমাস পরেই আর ভাড়া বহন করা সম্ভব হয়নি অনেক প্রতিষ্ঠানের। ফলে একের পর এক কিন্ডারগার্টেন বন্ধ হয়েছে।
শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থায় কিন্ডারগার্টেন প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এক তথ্যে চার হাজারের বেশি কিন্ডারগার্টেন ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গেছে জানা যায়। এভাবে চলতে থাকলে আরও বন্ধ হয়ে যাবে। সেই সাথে এর সাথে জড়িত মানুষগুলো বেকারত্ব বরণ করবে। এদের প্রত্যেকেই উচ্চ শিক্ষিত। যারা কিন্ডারগার্টেন ঘিরেই স্বপ্ন দেখেছিল। আর করোনা মহামারীর এই সময়ে একটি বিকল্প চাকরি যোগাড় করাও কঠিন ব্যাপার। ফলে যা হবে তা হলো এসব শিক্ষক জীবিকার তাগিদে কোনো পেশা বেছে নেবেন। রাস্তার ধারে কোনো ব্যবসা করবেন অথবা অন্য কোনো পেশা। করোনার আগেও এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ঘিরেই ছিল তাদের জীবন ও জীবিকার স্বপ্ন। সেই স্বপ্ন এখন ফিকে হয়েয়ে। যতই দিন সামনে যাচ্ছে ততই স্বপ্ন নিভে যাচ্ছে। কারণ আয়ের একমাত্র উৎস সেই প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো আয় আসছে না। করোনা পরিস্থিতিও এখন আরও জটিল হয়েছে। ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া সম্ভব হবে না।
শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজ লাইক দিন ও ফলো করুন( ক্লিক করুন)।
করোনায় পেশা হারিয়েছেন, বদলেছেন এই তালিকায় আরও অনেকেই রয়েছেন। তার মধ্যে এই কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক-কর্মচারী রয়েছেন। এমন একটি পেশা যা প্রতিনিয়ত মানবতা ও মনুষ্যত্বের উন্মেষ ঘটিয়ে চলেছে। সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকেই অপ্রাতিষ্ঠানিকভাবে এই কাজটি এক শ্রেণির মানুষ করে আসছে। শিক্ষা দানের প্রতিটি স্তরে যারা এই দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছে তাদের সবার দায়িত্বই এক। কিন্তু সব শিক্ষকের জীবন যাপন কি একই সরলরেখায় প্রবাহিত হয়? বহু প্রতিকুলতায়ও শিক্ষকদের শিক্ষাদানের এই প্রচেষ্টা বন্ধ হয়নি। কম পারিশ্রমিক, প্রতিকুল পরিবেশ কোনো কিছুই শিক্ষকদের দমাতে পারেনি। শিক্ষকরা আছে জন্যই সমাজ সুস্থতার আলো দেখেছে। যুগ যুগ ধরেই শিক্ষকরা এটাই করে আসছে।
শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।
প্রাথমিক স্তর থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষা দানে যারা নিয়োজিত আছেন তারা সবাই শিক্ষক। দেশে লাখ লাখ শিক্ষক নিরলস প্রচেষ্টায় এই মহান কাজটি করে যাচ্ছে। এত এত গুণের সমাবেশ ঘটাতে হয় যে একজন অতিমানবেরও বুঝি এত মতা থাকে না। সেজন্য শিক্ষকতাকে পেশা না বলে সেবা বলা হয়। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে শিক্ষকদের অবস্থা দেশে খুব একটা সুবিধার নয়। একজন শিক্ষককে বলা হয় আজীবন ছাত্র। জ্ঞান আহরণে তার তৃষ্ণা অপরিসীম। নিজে না শিখলে অন্যকে কি শেখাবেন। তাই তো তাকে পড়তে হয়, জানতে হয় এবং জানাতে হয়। এই জানানোর কাজটি হচ্ছে শিকতার জীবনের সবথেকে পরিশ্রমী এবং কঠিন কাজ। কারণ তার জানানোর কাজটি সফল হয়েছে কি না তা বুঝতে পারাও একটি বড় দতার ব্যাপার।
শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজ লাইক দিন ও ফলো করুন( ক্লিক করুন)।
দেশে সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত শিক্ষক যেমন আছে পাশাপাশি আছে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চাকুরিরত শিক্ষক। সরকারি বেতনভুক্ত শিক্ষকের পাশাপাশি দেশে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাদানে নিয়োজিত শিক্ষকের সংখ্যা প্রচুর । আবার নন এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের বেতনের উৎসও প্রাতিষ্ঠানিক। সরকারি বা বেসরকারি যাই হোক না কেন প্রতিটি শিক্ষকের দায়িত্বই একজন শিক্ষার্থীকে মানুষ করে গড়ে তোলা। অর্থাৎ তাদের প্রত্যেকের উদ্দেশ্যই এক ও অভিন্ন। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আয়ের মূল উৎস হলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রদত্ত বেতন, প্রাইভেট বা কোচিং ইত্যাদি। প্রাইভেটের ওপর নির্ভর জীবন যে কতটা দুর্বিষহ তা কেবল ভুক্তভোগী শিক্ষকরাই জানেন। কারণ প্রতিষ্ঠান থেকে যে বেতন দেয় তা প্রায়ই যৎসামান্য। শহর ও মফস্বল অঞ্চলভেদে এই বেতনের হার কম বেশি হয়ে থাকে। তবে যাই হোক প্রাইভেট বা নন এমপিওভুক্ত শিক্ষক হোক তিনি একজন শিক্ষক এবং তিনি শিক্ষা দানের মতো মহৎ একটি পেশায় নিয়োজিত।
শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।
পত্রপত্রিকায় মাঝে মধ্যেই এসব শিক্ষকের করোনাকালে জীবন ধারণ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হচ্ছে। কিছু কিছু সংবাদ চোখে জল এনে দেয়। কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা এখন চরম দুর্দশায় আছেন। স্কুল বিক্রি করার মতো সংবাদও পত্রিকায় পড়তে হয়েছে। স্কুলের শিক্ষকদের বেতন দীর্ঘদিন না দিতে পারা, স্কুল ভবনের ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ মেটাতে না পেরে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কেউ কেউ। আবার শিক্ষকতা না থাকায় মৌসুমি ফলের ব্যবসার খবর বা অন্য ব্যবসার খবরও পড়েছি। সত্যি এই মানুষগুলো খুব কষ্টে আছেন। এই সময়ে তাদের জন্য কোনোভাবে সাহায্য করা যায় কি না তা দেখা প্রয়োজন। এই শিক্ষকগুলোও দেশের লেখাপড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষার মানোন্নয়নে এদেরও ভূমিকা রয়েছে। এদের দুর্দশা ঘোচাতে কিছু করা প্রয়োজন। এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা তাদের দুর্দশা জানাতে মানববন্ধন করেছে। রোজার ঈদ এবং কোরবানির ঈদ কোনো ঈদেই তাদের মুখে হাসি থাকবে না। আশা করি এ দুঃসময় দ্রুত কেটে যাবে।
শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজ লাইক দিন ও ফলো করুন( ক্লিক করুন)।
করোনাকালীন দুর্যোগ একসময় কেটে যাবে। শিক্ষার গতি আবার স্বাভাভিক হবে। মাঝখানে এই সময়টা পার করতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোও বাঁচিয়ে রাখতে হবে এবং শিক্ষকদেরও টিকে থাকার সুযোগ দিতে হবে। তাদের জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। এ দুইয়ের সমণ¦য় করেই আমাদের সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
লেখক: অলোক আচার্য,সাংবাদিক ও কলামিষ্ট,পাবনা।
Email-sopnil.roy@gmail.com
শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজ লাইক দিন ও ফলো করুন( ক্লিক করুন)।
শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।
Posted ৫:৫৬ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১১ জুলাই ২০২১
শিক্ষার আলো ডট কম | শিক্ষার আলো
আর্কাইভ
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ||
৭ | ৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১ | ১৩ |
৪ | ১৫ | ১৬ | ১ | ৮ | ১৯ | ২০ |
২১ | ২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ |
২ | ৯ | ৩০ |