বুধবার ২৯শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা বাঁচতে চায়

করোনায় দিশেহারা অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষকরা

শাহ মোঃ রকিবুল ইসলাম   |   বুধবার, ০৭ জুলাই ২০২১ | প্রিন্ট

করোনায় দিশেহারা অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষকরা

শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড মহান পেশা শিক্ষকতায় এ শব্দগুলো খুবই হাস্যকর ও অসম্মানজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের মতো অভিশপ্ত বেসরকারি নন এমপিও অনার্স-মাস্টর্স শিক্ষকদের কাছে। সময়ের চাহিদা ও যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে বটে, কিন্তু নন এমপিও শব্দযুক্ত শিক্ষকদের জীবন থমকে গেছে। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে এদেশ স্বাধীন হয়েছে। অথচ এখনো স্বাধীন দেশের শিক্ষকরা পরাধীনদের মতো অন্নহীন। দুমুঠো ভাতের জন্য তাদের রাস্তায় নামতে হয়। ভাবতেও আমার কষ্ট হয়। জাতি গড়ার কারিগরদের যদি দু’মুঠো ভাতের অধিকারের জন্য দিনের পর দিন রাস্তায় ঘুরতে হয় তাহলে শিক্ষিত জাতি গঠনের স্বপ্নপূরণ হবে কিভাবে? শিক্ষা ব্যবস্থার কেন এমন দুরবস্থা? শিক্ষকদের কেন বেতনের জন্য কাঁদতে হবে? তাঁরা কি দেখেন না নাকি অন্ধ-বধির সেজে বসে থাকেন?

শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজ লাইক দিন ও ফলো করুন( ক্লিক করুন)।


গত ১৭ জুন, ২০২১ খ্রিঃ তারিখে মহান জাতীয় সংসদে অনার্স মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিও ভুক্তির বিষয়টি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট উপস্থাপন করেন কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য আঃ কঃ মঃ সরওয়ার জাহান বাদশাহ্। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বাধীন দেশে, শেখ হাসিনার বাংলাদেশে, মধ্যম আয়ের বাংলাদেশে শিক্ষায় এই বৈষম্যে থাকতে পারে না। বর্তমান বাজেটের বরাদ্দ থেকেই এই শিক্ষকদের এমপিও সমস্যা সমাধান হবে বলে আশা রাখি’। অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির বিষয়টি উপস্থাপনের জন্য মাননীয় সংসদ সদস্য মহোদয়কে বেসরকারি অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।


মহামারী করোনা ভাইরাস আমাদের মতো শুধুমাত্র নামধারী নন এমপিও শিক্ষকদের শরীরে প্রবেশ না করলেও মনে ক্ষত তৈরি করেছে ঠিকই। আমরা এমন একটা সময় পার করছি যা আমাদের জায়গায় থাকা মানুষ গুলো ছাড়া আর কেউ বুঝবে না। ‘পকেটে টাকা নেই’ এই শব্দটি যখন মনে হয়ে যায়, তখন বিনা কারণে চোখের কোণে জল জমা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা। বাচ্চার কয়েকটি আবদার পূরণ করা, বাবা-মায়ের ঔষধ কেনা, স্ত্রীর সামান্য প্রয়োজনেও ‘টাকা নেই’ শব্দটি কতবার আর উচ্চারণ করা যায়? আমাদের অপরাধ কী? আমরা কি এদেশের নাগরিক নয়? আমরা কি রাষ্ট্রে প্রচলিত আইনের অধীনে নয়? গত ১৭ মার্চ, ২০২০ খ্রিঃ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এমপিওভুক্ত কলেজের নন এমপিও অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকগণ দীর্ঘ ২৯ বছর জনবল কাঠামোর বাইরে থাকায় এমপিওভুক্তির আওতায় আসেনি। এদিকে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় কলেজ কর্তৃপক্ষ নামমাত্র বেতনটুকুও দিতে না পারায় স্বাভাবিক জীবনও নেই সারাদেশের নন এমপিও সাড়ে ৫ হাজার অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকের। দৈনন্দিন জীবন-জীবিকার চিন্তায় দিশেহারা অবস্থায় পড়েছেন এসব শিক্ষক। ‘শিক্ষক’ হয়ে লজ্জায় না পারছেন কারো কাছে হাত পাততে, না পারছেন ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে ত্রাণ চাইতে।

শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজ লাইক দিন ও ফলো করুন( ক্লিক করুন)।


‘প্রতি বছর ঈদ আসে মহাসমারোহ, আবার চলেও যায়। সরকারি ও এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা বেতন-বোনাস পেলেও, অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের এমপিও না থাকায় বোবা কান্না আর গগণবিদারী আর্তনাদে আকাশ বাতাস ভারী হয়’। প্রিয় সন্তানের লাল জামা কেনার স্বপ্ন অপূর্ণ রয়ে যায়। করোনাকালেও যেখানে স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ অনেক মেগা প্রকল্পের কাজ বন্ধ না হয়েও বরং অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলছে, সেখানে দেশের উচ্চশিক্ষা স্তরে বিধিমোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকগণ সরকারি এমপিওভুক্তির অভাবে কঠিন অর্থসংকটে পড়েছেন। স্বাধীনতার সূবর্ণজয়ন্তী ও মুজিব শতবর্ষ পালনের বছরেও জাতি গড়ার কারিগররা রুটি-রুজির চিন্তায় থাকবে এটা মেনে নেয়া কষ্টকর।

শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতির সমন্বয়হীনতায় অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের ভাগ্যে এমপিও নামক ‘সোনার হরিণ’ অধরাই রয়ে গেছে। অথচ মাসিক ১২ কোটি হিসেবে বার্ষিক ১৪৪ কোটি টাকা বাজেটে ব্যয় বরাদ্দ হলেই অবহেলিত শিক্ষকদের স্বপ্ন পূরণ হতো, বেঁচে থাকার সুযোগ হতো। অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিধিমোতাবেক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েও শুধুমাত্র জনবল কাঠামোর অজুহাত দিয়ে দীর্ঘ ২৯ বছর ধরে নন এমপিও!! ফলে প্রতিষ্ঠান এমপিও হলেও, এসব শিক্ষকরা সরকারের কোন সুযোগ- সুবিধাই পায় না। প্রতিষ্ঠান ভেদে ৫,০০০/১০,০০০ টাকা দেওয়া হয় যা অত্যন্ত অমানবিক ও কষ্টকর । সকল সুশীল ব্যক্তিবর্গ প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকদের জনবল কাঠামোয় অন্তর্ভুক্ত করে এমপিও এর কথা জোড়ালো ভাবে উত্থাপন করলেও কোন অদৃশ্য শক্তির কারণে তা বার বার উপেক্ষিত। একটা প্রশ্ন বারবার মনে উঁকি মারে ‘জনবল কাঠামোর জন্য মানুষ, না মানুষের জন্য জনবল কাঠামো?’

শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজ লাইক দিন ও ফলো করুন( ক্লিক করুন)।

দেশে বেসরকারি কলেজে ৫৫০০ জন অনার্স-মাস্টার্সের শিক্ষক বিনা বেতনে প্রায় ২৯ বছর ধরে উচ্চ শিক্ষায় পাঠদান করে যাচ্ছেন। সামান্য কিছু টাকা নাকি সরকারের জন্য বোঝা। অথচ আমার দেশে ভিনদেশি রোহিঙ্গাদের জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ হয়। একই ধরণের নিয়োগ নিয়ে কলেজ সরকারি হওয়াও বিসিএস ক্যাডারভুক্ত হয়ে আরাম আয়েশে দিন কাটাচ্ছেন অনেক কলেজের অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকগণ। আমাদের এমপিও’র জন্য কত আলোচনা, দফায় দফায় কত বৈঠক, কত ভিক্ষুকের বেশে শূণ্য থালা হাতে মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচি, কত স্মারকলিপি, কত আশ্বাস, কত লোকের পিছু হাঁটা সবই বৃথা। বাংলাদেশ এক অদ্ভুত বুদ্ধিজীবীদের দখলে। অন্ধ বধির কর্মকর্তারা যেন মুখে তালা লাগিয়ে বসে আছেন। কেউ বলে না, কেন এসকল শিক্ষকদের এমপিও হয় না? লোকে যখন জানতে চায় ‘কলেজে বিল হইছে গো?’ তখন মুচকি হাসি দিয়ে হয়তো মিথ্যে বলি, না হয় এড়িয়ে যাই। এভাবে আর কত দিন? চরম হতাশায় ডুবে আছি আমরা অনার্স-মাস্টার্স শিক্ষকরা। এভাবে চলতে দম বন্ধ লাগে। আল্লাহ কি আমাদের মতো অসহায়দের পাশে দাঁড়াবেন না? নাকি সারা জীবন চাকুরী নামক বস্তুটি গায়ে সীল মোহরের মতো লাগিয়ে, না খেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে আরও নিকৃষ্ট অপমানের পথে হেঁটে যাবো। এ কারণেই কি না পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসের শ্রেষ্ঠ উক্তি মনের মাঝে উঁকিঝুঁকি মারে, ‘ঈশ্বর থাকেন ওই ভদ্র পল্লীতে, এখানে তাহাকে খুঁজিয়া পাওয়া যাইবে না।’

লেখক,
শাহ মোঃ রকিবুল ইসলাম
প্রভাষক, গোসাইবাড়ি কলেজ, ধুনট, বগুড়া। মোবাইল- ০১৯১৮-৫৬২১০৯

শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজ লাইক দিন ও ফলো করুন( ক্লিক করুন)।

শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

Facebook Comments Box

Posted ৩:৫৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৭ জুলাই ২০২১

শিক্ষার আলো ডট কম |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১৩১৫১৬
১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭৩০৩১
অফিস

চৌগাছা, যশোর-৭৪১০

হেল্প লাইনঃ 01644-037791

E-mail: shiksharalo.news@gmail.com