
মোহাম্মদ জাহির মিয়া তালুকদার | রবিবার, ০১ আগস্ট ২০২১ | প্রিন্ট
বছর কয়েক আগে একটা প্রশিক্ষণ করার জন্য ঢাকা গিয়েছিলাম । প্রশিক্ষণের আয়োজন আবাসিক থাকায় অনেক সুবিধা হয়েছিল । নীচ তলায় প্রশিক্ষণ কক্ষ ঠিক উপরের তলায় থাকার জায়গা। দিনটা ছিল বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন।খাবারের ম্যানুতে ইলিশ মাছের আইটেম রাখার অনুরোধ থাকায় কর্তৃপক্ষ ইলিশ সদৃশ মাছ ভাজি করে সবার পাতে দেওয়ার ব্যবস্থা করল। আমরা ও ইলিশ সদৃশ মাছের টুকরা ভক্ষণ করে দুধের স্বাদ গোলে মিটালাম । প্রশিক্ষণ শেষ করে অংশগ্রহণকারী সবাই মিলে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম । দুইটা টেম্পুতে করে রওনা হলাম। গন্তব্য ধানমন্ডির বত্রিশ নম্বর।বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘর দেখব। যেখানে জাতির জনক পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতেন।অনেক কথা অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে পুরো বাড়ি জুড়ে।
রীতিমত টিকিট কেটে লাইন ধরে একজন একজন করে ঢুকে পড়লামন বঙ্গবন্ধু স্মৃতি যাদুঘরে । শেষ বিকেলের দর্শনার্থী হওয়ায় সময় আমাদের হাতে খুব বেশী ছিল না ।দোতলা বাড়ির প্রতিটি কক্ষ বঙ্গবন্ধু ও উনার পরিবারের সদস্যদের স্মৃতিতে ভরপুর।আমরা একে একে বঙ্গবন্ধুর শয়ন কক্ষ , ড্রইংরুম, পড়নের জামা, ধূমপান করার যন্ত্র, ছাইদানি, চোখের চশমা, হাতের ঘড়ি, লেখা ডাইরির অংশবিশেষ ইত্যাদি খুটিয়ে খুটিয়ে দেখতে লাগলাম। পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের ছবি দেখতে লাগলাম। সব গুলো জিনিস চোখ বুলিয়ে বুলিয়ে দেখে যাচ্ছি আর অবচেতন মনেই অন্তরের মাঝে ৭ই মার্চের ভাষণ বাজতে শুরু করলো।
“আর যদি একটা গুলি চলে , আর যদি আমার লোকদের হত্যা করা হয়….. ” । সবচেয়ে গা কাটা দিয়ে উঠার মতো কথা হলো .. ‘‘ আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না , এদেশের মানুষের অধিকার চাই ….” ভাষণ যেন হৃদয়ের মাঝে হাতুরিপেটা করছে। গায়ে লুম কাটা দিয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে আজকের দিনে ও আমি একাত্তরের হাত ধরে বসে আছি। আমাকেই যেন নির্দেশ দিচ্ছেন “ ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল ” । প্রায় অর্ধ শতাব্দীর আওয়াজ যদি আজকের দিনে ও মনে শিহরণ জাগায় , ঝাপিয়ে পড়ার তুমুল আগ্রহ ছড়িয়ে দেয় সারা দেহ মনে তাহলে ঐ সময় যারা জনসভায় উপস্থিত ছিলেন তাদের অবস্থা সহজেই অনুমান করা যায়।
যখন দুতলায় উঠার জন্য সিঁড়ির ধাপ গুলো মাড়াচ্ছি তখন গুলিবিদ্দ বঙ্গবন্ধুর ছবির দিকে থাকতেই পাশে দেয়ালের গাঁয়ে ছিদ্র দেখতে পাই । ভেতরটা যেন কচ কচ করে উঠলো । কি নির্মম পরিবেশ ছিল সেদিন এই বাড়িতে । ঘাতকরা কত নির্মম ও নিষ্ঠুর হলে সারা বাড়িতে রক্ত গঙ্গা বইয়ে দিতে পারে। সারা দেশের চেতনার উৎস কে কেমন নির্মম ভাবে হত্যা করেছিল ঘাতরা, দেয়াল তার জ্বলন্ত সাক্ষী বহন করে নিরবে আজ ও দাঁড়িয়ে আছে। দেয়ালের এক একটি ক্ষত যেন সারা বাংলার হৃদয়েরই ক্ষত । আস্তে আস্তে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে দোতলায় উঠে ই দেখতে পেলাম মুক্তি যোদ্ধ সংক্রান্ত অনেক গুলো স্মৃতি চিহ্ন । দোতলার বেলকনিতে যখন গেলাম মনে হলো জীবন্ত বঙ্গবন্ধু যেন আজ ও সেখানে চেয়ারে বসে দখিনা হাওয়ায় গা এলিয়ে দিয়ে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নে প্রতিটা মুহূর্ত আচ্ছন্ন হয়ে আছেন।
সময়ের স্রোত ধারা আমাদের কে শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছে । মন্তব্য বইয়ে কষ্টের ছিটে ফুটা লিখে দিয়ে ভারাক্রান্ত মন নিয়ে বের হওয়ার জন্য যখন গেইটের কাছাকাছি এলাম তখন বিদেশী লোকজন নিয়ে কিউরেটর মহোদয় যাদুঘরে প্রবেশ করছেন। একটু অপেক্ষা করে আমরা যখন বের হয়ে আসলাম। তখন ও দেয়ালের ক্ষত গুলো মনের মাঝে হাতুরিপেটা কেরছিল । আজ বঙ্গবন্ধুর শাহদত বার্ষিকী তে ও ঘাতকের বুলেটের ক্ষত সারা জাতির অন্তরে যন্ত্রনার চিহ্ন হয়ে জেগে আছে। স্বাধীনতা আমরা পেয়েছি কিন্তু এর স্থপতিকে আমরা হারিয়েছি সেই কালো রাতে । তবে যতদিন পৃথিবীর অস্তিত্ব থাকবে বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকবেন সারা বাংলার মানুষের মনে, সারা বিশ্বময়। দেয়ালের কালো দাগের মাঝখানে স্মৃতিময় গীতিময় চির ভাস্বর হয়ে থাকবেন তিনি। জাতীয় শোক দিবসে তাঁর রোহের মাগফিরাত কামনা করছি।তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
—————————————————————————–
মোহাম্মদ জাহির মিযা তালুকদার
ইন্সট্রাক্টর, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার, বানিযাচং, হবিগঞ্জ ।
শিক্ষার আলোর ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।
Posted ৬:২৩ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০১ আগস্ট ২০২১
শিক্ষার আলো ডট কম | শিক্ষার আলো
আর্কাইভ
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৭ | |
৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১ | ১৩ | ৪ |
১৫ | ১৬ | ১ | ৮ | ১৯ | ২০ | ২১ |
২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২ |
৯ | ৩০ | ৩১ |