বুধবার ১২ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৭শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিশুর বিকাশ ও প্রথম হাতে খড়ি

কিন্ডারগার্টেন নয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় – শামসুন নাহার জেবা

শামসুন নাহার জেবা   |   রবিবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ | প্রিন্ট

কিন্ডারগার্টেন নয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় – শামসুন নাহার জেবা

শামসুন নাহার জেবা

প্রাথমিক শিক্ষা হলো শিক্ষার মূল ভিত্তি। এস্তরেই শিশুর প্রথম হাতে খড়ি। শিশুর সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে প্রথমেই ভিত্তিটা মজবুত করতে হয়। প্রাথমিক শিক্ষাই হলো সেই ভিত্তি।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে কিন্ডার গার্টেন ও কোচিং সেন্টার গুলো। কিছু ভালো মানের কিন্ডারগার্টেন আছে তাদের রেজাল্টও মোটামুটি ভালো। সেখানে বেশি বেতন দিয়ে ধনী ব্যক্তিদের সন্তানরা পড়াশোনা করে কিন্তু অধিকাংশ কিন্ডারগার্টেন গুলো মানসম্মত নয়, কিন্ডারগার্টেন পরিচালিত স্কুল গুলো ভাড়া করা বাড়িতে তাই সেখানে খেলার জন্য মাঠ থাকে না। ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা কিন্ডারগার্ডেন স্কুলগুলোতে ছেয়ে গেছে দেশ। শিক্ষকদেরও নাই তেমন শিক্ষাগত যোগ্যতা ও প্রশিক্ষণ।


আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন, অভিভাবকদের লোভ দেখিয়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তারা স্টুডেন্ট সংগ্রহ করে। তাদের ইচ্ছেমতো মনগড়া সিলেবাস তৈরি করে বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে শিক্ষার্থীদের উপর। তিন বছর বয়স থেকে তারা কেজি স্কুলে ভর্তি করে শিশুর স্বাভাবিক বিকাশ ব্যাহত করছে।
শিক্ষার প্রথম ধাপেই প্রতারিত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা কারণ কোন অনিয়মের মধ্যে শিশুর মেধা জাগ্রত হতে পারে না। শিশুর সম্ভাবনা ও শক্তিকে জাগিয়ে তুলতে শিশু বান্ধব আনন্দঘন অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে আর সেটা সম্ভব শুধুমাত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েই। যেখানে খেলার মাঠ নেই সেখানে কোন প্রাণ নেই। এমন পরিবেশে শিশুদের দৈহিক মানসিক ও নৈতিক বিকাশ হতে পারে না। ধ্বনি ও গরিব উভয় ধরনের শিশুর মিলেমিশে থাকার সুযোগ রয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে অভিভাবক নিজেই তার সন্তানকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া আসা করেন। এবং বাসায় নিজে ও হাউস টিউটর রেখে পড়ান। অভিভাবকরা সবসময় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি নজর দেন।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনা করে তাদের অধিকাংশ অভিভাবকরা চরম অসচেতন ও গরিব। তাদের সন্তানরা কোন ক্লাসে পড়ে এটাও অনেকে জানেন না খোঁজও নেন না। কিন্ডারগার্টেন স্কুলে বোর্ড বইয়ের পাশাপাশি আমাদের দেশের প্রচলিত শিক্ষা নীতিমালা অনুসরণ না করে নিজেদের মতো করে চালানো হয়। ভালো রেজাল্ট করানোর নামে কঠিন কঠিন সেই বইগুলো পড়াশোনা করিয়ে শিক্ষার্থীদের অসুস্থ প্রতিযোগিতার দিকে ঠেলে দেওয়া হয় যা একদমই কাম্য নয়। পক্ষান্তরে সারা বিশ্বে কোমলমতি শিশুদের যেখানে পড়াশোনার কোন চাপ দেওয়া হয় না বরং বেশি বেশি খেলাধুলার মাধ্যমে ও সৃজনশীল কাজের মাধ্যমে তাদের বিকশিত করার চেষ্টা করা হয়।


বছরের প্রথম দিন থেকেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্য বই পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে প্রাথমিক শিক্ষায় আমূল পরিবর্তন আসছে। নতুন করে কোন কেজি স্কুল যাতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে গড়ে না ওঠে সেদিকে নজর দিতে হবে। কেজি স্কুল ঠেকাতে সরকার ৪+ ও ৫+ বয়সী শিশুদের জন্য দুই বছর মেয়াদী প্রাক প্রাথমিক শিক্ষা চালু করেছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নিয়মিত বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় যা কেজি স্কুলগুলোতে করা হয় না।

এবার জেনে নিন এক নজরে কেন আপনার সন্তানকে কিন্ডারগার্টেন নয় বরং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভর্তি করাবেন—


১. অতিরিক্ত পাঠ্য বইয়ের চাপ নেই।
২. বেতন দেওয়ার চিন্তা নেই।
৩. প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও যোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক দ্বারা পাঠদান করা হয়
৪. মাল্টিমিডিয়া সহযোগে পাঠদান পরিচালিত হয়।
৫. শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি সুবিধা।
৬. বিনামূল্যে বই প্রদান করা হয় এবং ভর্তি করানো হয়।
৭. জাতীয় পর্যায়ে বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে।
৮. শ্রেণী পাঠদানে বাস্তব উপকরণ ব্যবহার করা হয়।
৯. শারীরিক ও মানসিক শাস্তি দেওয়া হয় না।
১০. খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ব্যবস্থা আছে।
১১. শ্রেণী পাঠদানে বিভিন্ন মাইনর গেইমস ব্যবহার করা হয়।

সর্বোপরি আপনার সন্তান সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষের জীবনমান সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয় একমাত্র প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
বিভিন্ন দিকে এসব সুবিধা থাকায় কেজি স্কুলে শিক্ষার্থী কমে আসবে বলে আশা করা যায়।

লেখক: শামসুন নাহার জেবা, শিক্ষক ও কলামিষ্ট, ঝিনাইদহ।

Facebook Comments Box

Posted ৮:৪৪ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৫ জানুয়ারি ২০২৩

শিক্ষার আলো ডট কম |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
১০১১১৩
১৫১৬১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭
৩০৩১  
অফিস

চৌগাছা, যশোর-৭৪১০

হেল্প লাইনঃ 01644-037791

E-mail: shiksharalo.news@gmail.com