এম.এ মারুফ সোহেল | বুধবার, ৩০ জুন ২০২১ | প্রিন্ট
পৃথিবীর সবচেয়ে অতি পরিচিত এক শব্দের নাম ভালোবাসা। আর সেই ভালোবাসা যদি হয় প্রতিদানহীন তবেতো কথায় নেই। কিন্তু আমরা কি কেউ কখনো ভাবি যে এই প্রতিদানহীন ভালোবাসা সকলে বাসতে পারেনা, দুচোখ দিয়ে যা দেখি ঘুম থেকে উঠে হয়তো তার উল্টোটা চোখের সামনে ভাসে। তবে হ্যাঁ একমাত্র পৃথিবীতে একজন ব্যক্তিই এই প্রতিদানহীন ভালোবাসতে জানে, পারে এবং যার মাঝে নেই কোন স্বার্থ। আছে কেবল দুচোখ ভরা স্বপ্ন; যে স্বপ্ন কাল থেকে কালান্তরে একজন মা দেখেন তার সন্তানের জন্য। আর তাই একমাত্র মা পারে তার সন্তানকে প্রতিদানহীন ভালোবাসতে!!
শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজ লাইক দিন ও ফলো করুন( ক্লিক করুন)।
কেননা, পৃথিবীর বুকে আমাদের একমাত্র নিরাপদ আশ্রয়স্থল হলো ”মা”। যত আবদার যত অভিযোগ সবই একজন সন্তান তার মায়ের কাছে করতে পারে এবং করেও। নাড়ী ছেড়া ধন; সন্তানের জন্য দশ মাস দশ দিন শুধু নয়, মায়ের সারাটা জীবন উৎস্বর্গ করেও যেন মায়ের তৃপ্তি নেই। কিন্তু সেই মায়ের জন্য কতটুকু করতে পেরেছি আমরা? কতটুকু ভাবি আমরা?
শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।
যদি ভাবতাম কিংবা ভেবে থাকি তবে বৃদ্ধাশ্রম তো একটা সন্তানের মায়ের জায়গা হতে পারে না..!
শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজ লাইক দিন ও ফলো করুন( ক্লিক করুন)।
মায়ের দোয়া সন্তানের জন্য কত বড় আর্শীবাদ তা আমরা অনেকেই হয়ত ভাবি না কিংবা ভাবতেও পারি না। কিন্তু সেই দোয়া কি অর্থ দিয়ে ক্রয় করতে হয়, নাকি কোন কিছুর বিনিময়ে সেটা পাওয়া সম্ভব? আমি মনে করি মায়ের প্রতি যথাযথ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দোয়া অর্জন করে একটা সন্তান তার জীবনটা বদলে নিতে পারে। তেমন কিছু অভিজ্ঞতার কথা শেয়ার করব আপনাদের সাথে ধারাবহিক ভাবে। মায়ের দোয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে আমার দেখা কিছু চরিত্র, যেটা রুপক অর্থে তুলে ধরলাম আপনাদেও কাছে।
শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।
মেহবুব হাসান। একজন সফল ব্যবসায়ী। যার ব্যবসার শুরুটা হয় পনের বছর বয়সে। মায়ের সাথে তার জীবন থেকে নেওয়া অভিজ্ঞতার প্রথম পর্ব শেয়ার করব আজ। খুব ছোট বেলাতেই তার বাবা মারা যান, যখন তিনি এ পৃথিবীর আলো বাতাস সম্পর্কে অনেক কিছুই হয়তো বুঝতেন না। যখন তার মায়ের বয়স মাত্র তেইশ। সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের সমস্থ সুখ বিসর্জন দিয়েছেন এই মা। ছোট বেলা থেকেই বাবার আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তিনি। কিন্তু মা কখনও সে অভাব বুঝতে দেন নি। ঘরে-বাইরে কাজ করে এই মা দিনের পর দিন আগলে রেখেছেন মেহবুব হাসানকে পরম মমতায়। দিয়েছেন সততা ও নিষ্ঠার শিক্ষা। গড়ে তুলেছেন মানুষের মত মানুষ হিসেবে। আশা তার সন্তান একদিন সমাজে কাছে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি হয়ে উঠবেন।
শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজ লাইক দিন ও ফলো করুন( ক্লিক করুন)।
মায়ের সাথে জড়ানো তার হাজারো স্মৃতি। মায়ের সাথে ছোট বেলার স্মৃতির কথা জানতে চাইলাম। মুহুর্তেই অশ্রসিক্ত চোখে মেহবুব হাসান বলছিলেন, যে বয়সে ঘুম পাড়ানির গল্প বলে ঘুম পাড়ায় আমাদের মায়েরা, সে বয়সে তার মা তাকে ঘুম পাড়িয়ে দিতেন ইসলামের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার গল্প বলে। যেখানে ঈশা (আঃ), ইসমাইল (আঃ) নুহ (আঃ) মুসা (আঃ) প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর নানা ঘটনার গল্প থাকত। সততা আর সহসীকতার পুরস্কার কি হতে পারে ঠিক তখন থেকেই মনে দাগ কেটে যায় তার। সৎ পথে আল্লাহর সাহায্য থাকে এটা তার মা তাকে খুব ভাল ভাবেই শিক্ষা দিয়েছিলেন। শিক্ষা দিয়েছিলেন নিজের যা আছে তাই দিয়ে কিভাবে মানুষের পাশে দাঁড়ানো যাই, কিভাবে মানুষের কষ্ট লাঘব করা যাই।
শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।
মায়ের ইচ্ছে ছিল না কখনো তার ছেলে চাকুরী করবে। তার মা প্রায়ই বলতেন আমার ছেলে বড়জোড় একটা পিয়নের চাকুরী পাবে। কিন্তু তা দিয়ে নিজে চলতে পারলেও; অসহায় মানুষদের সাহায্য করতে পারবে না। তাই ইচ্ছে ছেলে ব্যবসায়ী হোক। মেহবুব হাসানকে একদিন ডেকে বললেন তুমি কি করতে চাও? চাকুরী নাকি ব্যবসা? যখন তার বয়স মাত্র সতের। জীবন সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবার কিবা বয়স আমার হয়েছিল সেদিন? কিন্তু মায়ের চোখের দিকে তাকিয়ে কেনো জানি সেদিন বলে ফেলেছিলাম মা আমি ব্যবসা করবো। মা আমার দুচোখ ছেড়ে পানি ঝরালেন, আমিতো ভয় পেয়ে গেলাম যে, মা আমার কথায় কষ্ট পেলো কিনা। কেননা ব্যবসা করতেতো অনেক টাকা লাগে, এতো টাকাতো আমাদের নেই। পরক্ষণে মা আমার হেঁসে বললেন, ঠিক আছে বাবা তাই হবে! সেদিন জানতাম না মা আমার সিদ্ধান্তে কথা শুনে আনন্দে অশ্রু ছেড়েছিলেন, যার মাঝে ছিলো মায়ের দোয়া ও ভালোবাসা। কারণ মাও মনে মনে চাইতো আমি ব্যবসা করি।
শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজ লাইক দিন ও ফলো করুন( ক্লিক করুন)।
ব্যবসার পুঁজি বলতে মায়ের জমি বিক্রি করে সমস্থ অর্থ তুলে দিলেন ছেলের হাতে। সবার কথা ছিল একটাই, ছেলেটা এবার সমস্থ সম্বল নষ্ট করে ফিরবে। মায়ের আস্থা ছিল, দোয়া ছিল। ব্যবসার জন্য হাতে টাকা তুলে দেওয়ার সময় মা শুধু একটা উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন ”বাবা সততার সাথে ব্যবসা করবে”। অরে অরে আজ পর্যন্ত পালন করে যাচ্ছেন মায়ের দেওয়া সেই উপদেশ। মায়ের দোয়া নিয়ে ক্রমে ক্রমে উঠে এসেছেন ব্যবসায় সফলতার শীর্ষে। আজ তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী, সমাজের কাছেও যোগ্য নাগরিক।
শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।
মায়ের অসুস্থ্যতার সময়ে সকল কাজ ফেলে মায়ের পাশে থেকেছেন। সমস্থ পৃথিবীকে এক পাশে রেখে মাকে রেখেছেন অন্য পাশে। সবকিছু উর্ধ্বে মাকে ভালোবেসেছেন মন প্রাণ দিয়ে। একদিন মা পড়ে গিয়ে পায়ে ব্যাথা পান। সেদিনের রাতের স্মৃতি তার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। মায়ের পাশে থাকার জন্য অনুমতি চান মায়ের কাছে। কিন্তু স্ত্রী-সন্তান অন্য রুমে থাকলে রাতে ভয় পেতে পারে বলে মা বললেন, বাবা সমস্যা নেই। ওরা ভয় পাবে। তুমি তাদের পাশে থাক। তার স্ত্রীও থাকতে চাইলেন মায়ের পাশে। তাকেও নিষেধ করে তার সন্তানদের কাছে থাকতে বললেন। কিন্তু মায়ের কথা উপো করে মেহবুব হাসান থাকতে চাইলেন তার পাশে। শেষ পর্যন্ত মায়ের কথাতে দুই রুমের মাঝের রুমটাতে থাকার অনুমতি মিলল। কিন্তু সে রাতে কোন রকম ঘুম ছিলোনা মেহবুব হাসানের দুচোখের পাতায়।
শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজ লাইক দিন ও ফলো করুন( ক্লিক করুন)।
অসুস্থ্য মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন যে ঘুমিয়ে মতো হয়েছিলো ছেলে কিছুই জানে না। ঘুম নেই কিন্তু দেখলে মনে হবে অচেতন বিভোর ঘুমে। ভোর ৪ টার দিকে জোর করে চোখের পাতা খোলার মতো করে তাকাতেই দেখেন মা নাড়াচাড়া করে ঘুম ভাঙছে। ছেলে অপলক তাকিয়ে আছে মায়ের দিকে। মা বললেন তুমি ঘুমাওনি বাবা। ছেলের সরল উত্তর মা আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম কিনা জানি না কিন্তু আমার মনে হচ্ছে দুচোখ ভরে তোমাকে দেখছিলাম।
শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।
আজ মা নেই কিন্তু মায়ের দেওয়া সেই চাবি মেহবুব হাসানের ব্যবসা অনেক বড় হয়েছে। তার মতো আমিও মনে করি, মায়ের দোয়া কখনো বিফলে যায় না, কেননা এ যে বিধাতা প্রদত্ত এক বড় নিয়ামক। তাই আসুন মায়ের প্রতি অবহেলা নয়, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করি ও সকল ভালোবাসা দিয়ে মাকে আগলে রাখি বুকের মাঝে।
লেখক: এম. এ মারুফ সোহেল, নির্বাহী সম্পাদক, শিক্ষার আলো ডট কম
শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজ লাইক দিন ও ফলো করুন( ক্লিক করুন)।
শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।
Posted ৬:৩৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ৩০ জুন ২০২১
শিক্ষার আলো ডট কম | শিক্ষার আলো