শনিবার ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা ও কিছুকথা

শিক্ষকরা বসে বসে বেতন নিলে অনলাইন ক্লাস নিচ্ছে কে.?

নিজস্ব প্রতিবেদক   |   রবিবার, ১৩ জুন ২০২১ | প্রিন্ট

শিক্ষকরা বসে বসে বেতন নিলে অনলাইন ক্লাস নিচ্ছে কে.?

শামসুন নাহার জেবার অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীরা

“শিক্ষা নিয়ে গড়ব দেশে,শেখ হাসিনার বাংলাদেশ”- এই  স্লোগানে স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে আমাদের সকলের অভিভাবক মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রি শেখ হাসিনা বদ্ধপরিকর, এগিয়ে যাচ্ছে যখন আমাদের অর্থনীতির সকল সূচক; ঠিক তখনই বহিঃবিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশেও মহামারী কোভিড-১৯ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেয়। থমকে পড়ে দেশের বিভিন্ন কার্যক্রম, যার মাঝে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা, তথা আমাদের আগামীদিনের সুনাগরিক; আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।

কেননা, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিবেচনা ও স্বাস্থ্যবিধি মানতে গত বছরের ১৭ই মার্চ একযোগে বন্ধ হয়ে যাই সারাদেশের সকল প্রকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,স্থবির হয়ে পড়ে জনজীবন। থমকে যাই আমাদের শিশুদের স্বাভাবিক চলাচল, অনেকটা ঘরবন্দি হয়ে পড়ে সোনামণিরা। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পদচারণায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আর মুখরিত হয়না, শ্রেণি কক্ষেও শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের চিরচেনা রুপ দেখা যাই না।


ঠিক এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণ করতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর তাৎক্ষণিক নির্দেশনা ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় দেশের খ্যাতনামা শিক্ষকদের ধারণকৃত পাঠদান সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে প্রচার শুরু হলো, একইসাথে অনলাইন স্কুলিং “ঘরে বসে শিখি” কার্যক্রমের অংশ হিসাবে কিশোর বাতায়ন ও শিশু বাতায়নেও শুরু হয় লাইভ ক্লাস সম্প্রচার। এ ছাড়াও ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, জেলা, উপজেলা ও বিভাগীয় উদ্দেগ্যোও সোশ্যাল মিডিয়াই অনলাইন স্কুলিং পেজ খুলে কোনরকম প্রশিক্ষণ ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা ছাড়াই নিজ নিজ দায়িক্তবোধের জায়গা হতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় লাইভ ক্লাসে ঝাপিয়ে পড়ে আমাদের প্রতিথযশা শিক্ষকরা, যা নিঃসন্দেহে প্রশংস্বার দাবিদার।

যে পদ্ধতিটি বর্তমানে চলমান, সেটা অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা বলে পরিচিত সকলের কাছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনায় স্থবির শিক্ষা ব্যবস্থাকে সচল রাখতে সারাবিশ্বের ন্যায় আমাদের দেশেও এই অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে আর কি করার ছিলো, বরং সময় ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এই অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর করতে গিয়ে আমাদের শিক্ষকরা যেমন নিজেকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন ; তেমনি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ যেনো বাস্তবিক ডিজিটালে রুপ নিয়েছে। সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।


কিন্তু প্রশ্ন হলো যাদের জন্য এই আয়োজন ? সেই কোমলমতি শিক্ষার্থীরা কতোটুকু খাপ খাওয়াতে পেরেছে? সংযুক্ত হতে পেরেছে ? কিংবা কতোটুকু উপকৃত হচ্ছে ? এক্ষেত্রে আমি একজন শিক্ষক ও অভিভাবক হিসাবে বলবো যে, অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রথমদিকে অনেকের কাছে ব্যয়বহুল ও দুর্লভ মনে হলেও সময়ের প্রেক্ষাপটে এ ব্যবস্থা এখন অনেকটা সহজ ও বোধগোম্য হয়ে উঠছে সকলের কাছে। তাছাড়া আমাদেরকে মনে রাখতে হবে যেকোন বিষয় প্রথম শুরু হলে নানাবিধ জটিলতার মুখোমুখি হতে হয়, আর বিষয়টি যদি প্রযুক্তিনির্ভর হয় সেখানে একটু জটিলতা বেশি দেখা দেয়। কেননা, এখানে ডিভাইস ও সেটি ব্যবহারসহ; এটি চালাতে ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয় সুবিধাও থাকতে হয়। যেহেতু শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আমরা কেউ এ ধরণের পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়নি কখনো, সেহেতু জটিলতার সে কালো মেঘ প্রথম দিকে অন্ধকারে রুপ নিলেও; সময়ের স্রোতে ভাসতে ভাসতে সেই মেঘ ভোরের উদীয়মান সূর্যের মতো আলোকিত করছে দিনে দিনে।

আর তাই , অনলাইন ক্লাসের সুফল পেতে শুরু করেছে অনেকে। কেননা, অনলাইন ক্লাসের ফলে শিক্ষার্থীরা যেকোন স্থান হতে ক্লাসে যুক্ত হতে পারে এবং ঐ ক্লাসের রেকডিং সংরক্ষণ করে পুণরায় সে বারবার দেখতে পারছে। অনেকে বলতে পারেন, তাহলে অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতি কি গতানুগতিক শিক্ষা ব্যবস্থার পরিপূরক ? আমি এক কথায় বলবো, না। কারণ অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থা কখনো গতানুগতিক শিক্ষা পদ্ধতির পরিপূরক হতে পারে না। এটি যেকোন মহামারি কিংবা বিপর্যস্থ পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষা ব্যবস্থার চলমান প্রক্রিয়া ধরে রাখতে হলে একমাত্র উপযুক্ত পদ্ধতি হতে পারে এবং হয়েছেও।
তবে এক্ষেত্রে অভিভাবকদের আরো সচেতন হতে হবে। শিক্ষার্থীরা যাতে তাদের সময়কে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারে সেজন্য সকল অভিভাবক বিশেষ করে মায়েদের ভূমিকা বেশি বেশি পালন করতে হবে। শিক্ষকদের দিকে আঙুল তোলার আগে ঐ পিতা-মাতাকে ভাবতে হবে, আমি কি আমার দায়িক্তটা সঠিকভাবে পালন করছি? হতে পারে আমার ডিভাইস কেনার সামর্থ নেই কিন্তু আমি কি আমার সন্তানকে টিভি কিংবা পাশের বাসার কারো সাথে একই ডিভাইসে ক্লাস যেনো দেখতে পারে সে বিষয়টা নিশ্চিত করতে কি পারছি ?


কেউ কেউ বলে থাকে, করোনার এই দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষকরা বসে বসে বেতন নিচ্ছে। আসলে কি তাই ! নিজেকে একবার প্রশ্ন করুনতো। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম আপনার কথাটা সত্য, তাহলে এই অনলাইন ক্লাস নিচ্ছে কারা? আপনার কি মনে হয় এই শিক্ষকরা শুধুমাত্র শখ করে ক্লাস নিচ্ছেন ? আপনি কি জানেন ? স্বাভাবিক ক্লাসের চেয়ে অনলাইন ক্লাসে একজন শিক্ষককে বেশি পরিশ্রম করতে হয় ? নিজস্ব অর্থ খরচ করে নানা যন্ত্রপাতি ক্রয় করে ইন্টারনেট বিল দিয়ে নানা বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে এই অনলাইন ক্লাস ভার্চুয়ালি প্রকাশিত হয় ? তাছাড়া ঐ শিক্ষক যদি নারী হয় তাহলে তাকে কতোটা প্রতিকূল পরিবেশের মাঝে ক্লাসগুলো নিতে হয় ? পাশাপাশি সকল শিক্ষককে বিদ্যালয়ে বিভিন্ন প্রকার কার্যক্রমের সাথে কতোটা প্রতিনিয়ত কাজ করতে হয় ?

উত্তরগুলো আমি নাইবা দিলাম, শুধু বলবো আসুন শিক্ষা ও শিক্ষার্থীর উন্নয়নে কাজ করি। আমি বিশ্বাস করি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আমরা যদি যার যার স্থান হতে নিজ নিজ কাজটা ঠিকমতো করতে পারি তবে সকল শিক্ষার্থী এই অনলাইন ক্লাসের সুবিধা পাওয়া সম্ভব।

জীবনের প্রতিটা কাজেই কিছু না কিছু সমস্য থাকবেই, তাই অনলাইন শিক্ষা ব্যবস্থায় কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকলেও দিনে দিনে এর সুফল সকলে পাচ্ছে এবং ভবিষৎ এ আরো বৃদ্ধি পাবে । তাছাড়া পার্থিব জগতে যেকোন সময় যেকোন মহামারি এসেছে, আগামীতেও আসবে, আমাদের উচিৎ সকল সময়ে সকল পরিস্থিতিতে নিজেদেরকে খাপ খাওয়ানোর জন্য প্রস্তুত রাখা।তাহলেই একটি সুন্দর বাংলাদেশ আগামী প্রজন্মের জন্য গড়ে তুলতে পারবো।

লেখক: শামসুন নাহার জেবা, শিক্ষক ও কলামিষ্ট, ঝিনাইদহ।

 

……………………………………………

আপনি কি শিক্ষক? লেখক ? কিংবা গবেষক ?

আপনি কি আপনার লেখা প্রকাশ করতে চাচ্ছেন? বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন এখানে।

তাহলে আর দেরি না করে আজই আমাদেরকে লিখে পাঠান, লিখতে পারেন নিয়মিতও। আমরা প্রকাশ করবো আপনার লেখা।

শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজে লাইক দিতে ক্লিক করুন। সকল সংবাদের সাথে থাকুন: https://web.facebook.com/shiksharalo.official

শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে শিক্ষার আলোর ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। লাইভ অনুষ্ঠান (টকশো, গান ও কবিতার আসর), আইটি ট্রেনিং ও অনলাইন ক্লাসের ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।

শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।

Facebook Comments Box

Posted ৪:১৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ১৩ জুন ২০২১

শিক্ষার আলো ডট কম |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১
অফিস

১১৯/২, চৌগাছা, যশোর-৭৪১০

হেল্প লাইনঃ 01644-037791

E-mail: shiksharalo.news@gmail.com