নিজস্ব প্রতিবেদক | বুধবার, ০৫ অক্টোবর ২০২২ | প্রিন্ট
আজ বুধবার ( ৫ অক্টোবর) বিশ্ব শিক্ষক দিবস। ১৯৯৪ সাল থেকে জাতিসংঘের অঙ্গসংস্থা ইউনেস্কোর উদ্যোগে প্রতিবছর ৫ অক্টোবর এ দিবসটি উদযাপিত হয়।২০২২ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হলো- ‘The transformation of education begins with teachers.’ অর্থাৎ ‘ শিক্ষকদের দিয়েই শিক্ষার রূপান্তর শুরু।’ বিশ্ব শিক্ষক দিবস শিক্ষা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পালন করা হয়।
কেননা, শিক্ষাই জাতির মেরুদণ্ড। শিক্ষকরা হচ্ছেন সেই মেরুদণ্ড তৈরির কারিগর। একজন শিক্ষার্থীকে প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে একজন শিক্ষক মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন।
একজন শিক্ষক একজন ছাত্রের অভিভাবক। শিক্ষক যে শুধু মাত্র পড়াশোনার ক্ষেত্রেই হস্তক্ষেপ করে এমন না। একজন শিক্ষক একজন ছাত্রকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলেন। ছাত্রদের মনের সুপ্ত প্রতিভাকে জাগ্রত করে তুলেন। একটা ছাত্রের জীবনের লক্ষ্য থেকে শুরু করে জীবনের সফলতার প্রত্যেকটা ধাপে শিক্ষকের অবদান অনস্বীকার্য। আলোকিত সমাজ গঠনের মূল চালিকাশক্তি ও দক্ষ কারিগর তিনি। শিক্ষক মানুষের সুপ্ত প্রতিভা, গুণাবলির বিকাশ, ব্যক্তিত্বের জাগরণ, মেধা-মননে উৎকর্ষতা সাধন করে জীবন আলোকিত করেন। বাবা-মা শিশুকে জন্ম দেন ও লালন-পালন করেন ঠিকই কিন্তু তাকে সফল ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলেন শিক্ষক। সমাজে আধুনিকতার সূচনা ঘটান শিক্ষক, কারণ তিনি জ্ঞানে-বুদ্ধিতে ও পরিকল্পনায় থাকেন সবার চেয়ে এগিয়ে। তাই একজন শিক্ষককে সভ্যতার রচয়িতা বলা হয়।
শিক্ষকদের প্রতি অবহেলা নয়: শিক্ষকদের প্রতি করণীয় এ সমাজ ও রাষ্ট্রের অনেক কিছুই করার আছে। একজন শিক্ষক অন্যদের কাছে বেশি কিছুই চাই না, চাই সম্মান এবং সম্মানজনকভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা। মানুষের ভালোবাসা হলো একজন শিক্ষকের শ্রেষ্ট অর্জন, যা আর সকল পেশা থেকে এতোটা অর্জন সম্ভব হয়না, যতোটা শিক্ষকতা পেশায় সম্ভব। নানা সময়ে শিক্ষকতা পেশাকে নানা কারণে অনেকেই ছোট নজরে দেখে থাকেন। ফলে শিক্ষকরাও ভোগেন এক ধরনের হীনমন্যতায়। এটা ঠিক নয়। শিক্ষকরা জাতির কাণ্ডারি। তাই তাদের প্রতি সকল পর্যায়ের মানুষের বিশেষ নজর দেওয়া উচিৎ।তবে বিশেষভাবে আমি কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ করবো…….
সামাজিক মর্যাদা ও চাকরির নিশ্চয়তা প্রদানঃ
শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা ও চাকরির নিশ্চয়তা না থাকলে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই পেশায় আসতে চেইবে না। ফলে শিক্ষার্থীরা অনেক ক্ষেত্রে সুশিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শুধু বই পড়ে শিক্ষা লাভ করে সুনাগরিক হওয়া যায় না। একজন প্রকৃত সুনাগরিক গড়ে তুলতে হলে সুশিক্ষার প্রয়োজন। সুশিক্ষার জন্য চাই নিবেদিতপ্রাণ জ্ঞানী শিক্ষক। মেধাবী শিক্ষক ছাড়া সুশিক্ষা গ্রহণ সম্ভব নয়। মেধাবীদের এই পেশায় আকৃষ্ট করতে হলে তাদের চাকরির নিরাপত্তা ও আর্থিক নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে। একজন শিক্ষক যাতে তার পরিবার-পরিজনের লেখাপড়া, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের নূন্যতম চাহিদা মেটাতে পারে তার দিকে লক্ষ্য রেখে শিক্ষকদের প্রয়োজন মেটাতে হবে। তাহলে একজন শিক্ষকের কোচিং-প্রাইভেট-টিউশনির দিকে উৎসাহ কমে যাবে। কারণ অনেক শিক্ষক ইচ্ছের বিরুদ্ধে নিতান্তই বাঁচার তাগিদেও প্রাইভেট পড়ায়।
পেশাগত দক্ষতার উন্নয়নে প্রশিক্ষণ প্রদানঃ
মানসম্মত শিক্ষা প্রদান ও আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে পেশাগত দক্ষতাসম্পন্ন বিপুল সংখ্যক শিক্ষক প্রয়োজন। এক্ষেত্রে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে, শিক্ষক পেশাগত ও সামাজিক নানা সমস্যায় জর্জরিত হবেন না। সে কারণে পর্যাপ্ত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ ও তাদের পেশাগত মান উন্নয়নে শুরুতেই যথাযথ প্রশিক্ষণ নিশ্চিতকরণ।
শিক্ষকদের ভূমিকার কথা তুলে ধরাঃ
মানব সন্তানকে শিক্ষিত করে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে বলেই শিক্ষককে বলা হয় মানুষ গড়ার কারিগর। মা-বাবা যেমন শিশুকে জন্মদান করে, লালন করে, তেমনি শিক্ষক তার সকল মেধা, শ্রম ও সাধনা দিয়ে তাকে পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলে। তাই বাংলাদেশের সকল শিক্ষকের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে এদেশের সকল শিশুর জন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাঁদের ভূমিকার কথা তুলে ধরতে হবে; যাতে সামাজিকভাবে তাঁরা মর্যাদা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে।
কেননা, মাতা-পিতা শিশুকে জন্ম দেন আর শিক্ষক তাকে মানুষরূপে গড়ে তোলেন। শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে মানুষের প্রতিভার বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন শিক্ষক। যুগে যুগে কালে কালে বিভিন্ন ধর্মমতে পথভ্রষ্ট জাতিকে আলোর পথে ফিরিয়ে আনার জন্য মহান সৃষ্টিকর্তা মহামানবদেরকে শিক্ষক হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন। জ্ঞান বিজ্ঞান, তথ্য প্রযুক্তি, ধর্মীয় মূল্যবোধ সহ সকল জ্ঞান ভান্ডারের সাথে জাতি পরিচিত হতে পারে একমাত্র শিক্ষকের মাধ্যমে। দেশব্যাপী শিক্ষকদের বৈধ অধিকার ও মর্যাদা সুরক্ষা করা, শিক্ষকদের জীবনের মান উন্নত করার ব্যাপারে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, আদর্শ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক তৈরি এবং শিক্ষাঙ্গনে সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হওয়া সময়ের অনিবার্য দাবি। জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষকদের সর্বক্ষেত্রে মর্যাদা এবং মূল্যায়ন করা জরুরি। শিক্ষকদের মূল্যায়ন ছাড়া সুশিক্ষিত সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়।
আবার, একজন শিক্ষককে অবশ্যই মানবিক গুণাবলির অধিকারী হতে হয়। সততা, কর্মনিষ্ঠা, ধৈর্য, বিনয়, নম্রতা-ভদ্রতা, সময় সচেতনতা- এসব মানবীয় গুণ এ পেশার জন্য খুব বেশি জরুরি। শিক্ষার্থীরা মা-বাবার চেয়েও বেশি প্রভাবিত হতে পারেন একজন শিক্ষকের দ্বারা। তাই শিক্ষকদের মধ্যে এসব গুণ থাকলে শিক্ষার্থীরাও এসব শিখতে পারে। এবারের শিক্ষক দিবসে এই হোক শিক্ষকদের ব্রত- এ প্রত্যাশা সবার।
লেখক: এম. এ মারুফ সোহেল
প্রভাষক (দর্শন বিভাগ)
সরকারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেমোরিয়াল কলেজ
কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ।
Posted ৬:৪৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৫ অক্টোবর ২০২২
শিক্ষার আলো ডট কম | শিক্ষার আলো