শামসুন নাহার জেবা | শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১ | প্রিন্ট
পরিবার হলো প্রেম-প্রীতি ,ভালোবাসা ও মায়া-মমতায় ভরা এমন একটি সুসজ্জিত বাগানের নাম যেখানে প্রতিটি সদস্য তার চারিত্রিক গুনাবলী বিকাশের পর্যাপ্ত সুযোগ পায়। সত্যবাদিতা, সাহসিকতা, পরিশ্রমপ্রিয়তা , অনুগ্রহ, সহানুভুতি, সুবিচার, ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য বা সংযমশক্তি, অন্তর্দৃষ্টি ,দূরদৃষ্টি , দৃঢ়তা উচ্চাশা, ভ্রাতৃত্ব, স্বদেশপ্রেম ইত্যাদি নৈতিক গুনাবলীর অন্তরগত। আর পরিবার থেকেই শুরু হয় এই সমস্ত নৈতিক গুনাবলী শিক্ষার হাতেখড়ি ।
শিশুর জীবন বিকাশের সবক্ষেত্রেই পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম।বিদ্যালয় নিঃসন্দেহে সবধরনের শিক্ষাকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করে কিন্তু পরিবার থেকে যদি শিক্ষাটি আগেই শুরু হয় তাহলে তা এগিয়ে নিতে বিদ্যালয়ের পক্ষে অনেক সহজ হ্য়। তাছাড়া নৈতিক শিক্ষার মতো বিষয়টি শিক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবারই মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।একজন শিশু জন্মের পর ৪-৫ বছর পরিবারেই বেড়ে ওঠে।এই সময়ে তার মানসিক বিকাশ শুরু হয়। শিশুর মায়ের কোল তার শিক্ষার হাতেখড়ি। ফলে পরিবার থেকেই শিশু প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করে।
এজন্য শিশুর নৈতিক শিক্ষার সবরকম ব্যবস্থা করতে হবে যাতে তার দুনিয়া ও আখিরাত মঙ্গলময় হয়। শিশুকালেই শিষ্টাচার শেখাতে হবে যাতে তার আচার আচরণ সুন্দর হয়।শিশুকে ভালোমন্দ, ন্যায়- অন্যায়, কল্যাণ-অকল্যাণ বোঝাতে হবে, যাতে সে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে আছে-‘তোমরা নিজেদের সন্তানদের স্নেহ করো এবং তাদের ভালো ব্যবহার শেখাও।’ (বুখারী) ‘ সন্তানকে সদাচার শিক্ষা দেওয়া দান খয়রাতের চেয়েও উত্তম।’
পরিবারই শিশুর প্রথম বিদ্যালয়। একজন শিশুর ভেতরে মূল্যবোধ ,আখলাক,চেতনা ও বিশ্বাস জন্ম নেয় পরিবার থেকেই। পিতামাতা যে আদর্শ লালন করেন তাদের সন্তানরাও তাই ধারণ করতে চেষ্টা করে। নেপোলিয়ান বলেছিলেন-‘আমাকে একটি শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি উপহার দেবো।’আবার কবি গোলাম মোস্তফা বলেছেন-‘ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা সব শিশুরই অন্তরে।’অর্থাৎ একটি শিশুকে নৈতিক শিক্ষা দিয়ে বড় করতে হলে পরিবার তথা মা বাবার অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং পরিবারের কর্তব্য হলো শিশুর সুস্থ মানসিক বিকাশ সাধনে ও নৈতিক চরিত্র গঠনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়া।তাহলো-
১। শিশুর প্রতি যত্নশীল হওয়া,শিশুকে আদর ভালোবাসা,স্নেহমমতা দেওয়া।
২। সদুপদেশ প্রদান করা।
৩।নৈতিকতা ও মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়া।
৪। শিশুর চরিত্র গঠনে শিক্ষা দেওয়া।
৫।সৎ কাজের উপদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ করা।
৬।শিশুকাল থেকেই তার ভেতরে সামাজিক দায়বদ্ধতা সৃষ্টি করা।
৭।শিশুর সঙ্গে কখনও উচ্চস্বরে বা রাগত স্বরে কথা না বলা।
৮।শিশুকে যথেষ্ট সময় দেওয়া, তার সমস্যা ও কৌতূহলের যথাযথ উত্তর প্রদান করা।
শিশুকালের শুরুতেই পিতামাতার তথা পরিবারের কিছু ভুল ত্রুটির কারণে আমাদের যুবসমাজের অবক্ষয় দেখতে পাচ্ছি।তাই পিতামাতাকে হতে হবে সংবেদনশীল,সন্তানকে ভালোবাসতে হবে।সে যেন নৈতিক শিক্ষা নিয়ে বেড়ে ওঠে তার যথার্থ পরিবেশে তৈরি করতে হবে।শিশুকে ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে যাতে তার ইহকাল ও পরকাল দুটিই মঙ্গলময় হয়।
কোন শিশু যদি পিতামাতার অবহেলার কারণে পথচ্যুত হয়ে যায়, তাহলে সে হাশরের দিনে আল্লাহর কাছে সেই পিতামাতার বিরুদ্ধে ফরিয়াদ করবে, হে আমাদের রব! আমরা আমাদের অভিভাবক ও বড়দের অনুসরণ করেছি। তারা আমাদের বিপথগামী করেছে।কাজেই পিতামাতাকেও নৈতিকতার দিক দিয়ে হতে হবে অত্যন্ত সাবধাণী।
সর্বোপরি, একজন শিশুর একজন আদর্শ মানুষ হিসাবে গড়ে ওঠা যে পরিবার তথা পিতামাতার উপর নির্ভর করে মনে-প্রাণে তা উপলব্ধি করতে হবে। কারণ শিশুর নৈতিক শিক্ষায় পরিবারের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
লেখক: শামসুন নাহার জেবা, শিক্ষক ও কলামিষ্ট, ঝিনাইদহ।
……………………………………………
আপনি কি শিক্ষক? লেখক ? কিংবা গবেষক ?
আপনি কি আপনার লেখা প্রকাশ করতে চাচ্ছেন? বিস্তারিত পড়তে ক্লিক করুন এখানে।
তাহলে আর দেরি না করে আজই আমাদেরকে লিখে পাঠান, লিখতে পারেন নিয়মিতও। আমরা প্রকাশ করবো আপনার লেখা।
শিক্ষার আলো ডট কমের ফেসবুক পেজে লাইক দিতে ক্লিক করুন। সকল সংবাদের সাথে থাকুন: https://web.facebook.com/shiksharalo.official
শিক্ষার সব খবর সবার আগে জানতে শিক্ষার আলোর ইউটিউব চ্যানেলের সাথেই থাকুন। লাইভ অনুষ্ঠান (টকশো, গান ও কবিতার আসর), আইটি ট্রেনিং ও অনলাইন ক্লাসের ভিডিওগুলো মিস করতে না চাইলে এখনই শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন এবং বেল বাটন ক্লিক করুন। বেল বাটন ক্লিক করার ফলে আপনার স্মার্ট ফোন বা কম্পিউটারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভিডিওগুলোর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে।
শিক্ষার আলো ডট কমের ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।
Posted ৮:৪৩ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ১৮ জুন ২০২১
শিক্ষার আলো ডট কম | শিক্ষার আলো