
মোহাম্মদ জাহির মিয়া তালুকদার | বুধবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট
মোহাম্মদ জাহির মিয়া তালুকদার
মাত্রাজ্ঞান
মাত্রাজ্ঞান শব্দটা আমাদের জীবনের সাথে অতপ্রোতভাবে জড়িত । মানবজীবন শুরুর দিকে মাত্রার চমৎকার ব্যবহার লক্ষণীয় । জন্মের পর যদি শিশু সুতীব্র চিৎকার করে কাঁদে তখন উপস্থিত স্বজনরা খুব খুশি হয়, ভাবে শিশু সুস্থ আছে। আর যদি এ কান্না করার মাত্রাটা একটু কম হয় তাহলে চিন্তার ভাঁজ পড়ে সংশ্লিষ্টদের কপালে । তখন মনে হয় কোথাও যেন ঘন কুঁচকুঁচে আঁধার ঘাপটি মেরে বসে আছে । কখন যে ধারালো নখর দিয়ে আক্রমণ করে বসে তা বলা কঠিন।
যখন জীবন বাঁচানোর তাগিদে খাবার গ্রহণ করার তাড়া আসে তখনো খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের মাত্রাকে অতিক্রম করা কঠিন । মাত্রাতিরিক্ত খাবার গ্রহণ করা যেমন শরীর স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি কমমাত্রায় খাবার গ্রহণ করাটাও স্বাস্থের প্রতি হুমকী বাড়তে সাহায্য করে, রোগব্যাধি বাসা বাঁধতে অনেকটাই সহায়ক পরিবেশ তৈরি হয়ে ওঠে ।
যখন লেখাপড়ার হাতেকড়ি হয়, তখনো মাত্রজ্ঞান একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । মাত্রার অভাবে এবং অপ্রয়োজনীয় মাত্রার ব্যবহার নির্দিষ্ট শব্দ ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করতে পারে, এবং ভাবের বিপর্যয় ঘটাতে সাহায্য করতে পারে ।
বুঝার ক্ষেত্রেও মাত্রাজ্ঞান বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা অর্জনে সহায়ক হতে পারে । একটা বিষয়, যা বুঝাতে চায় তার চেয়ে বেশীমাত্রায় বুঝতে গেলে ঐ বিষয়ের গন্ডি পার হতে হয় । সে ক্ষেত্রে বিষয়ের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কোনটাই আর অর্জিত হওয়ার সুযোগ থাকে না। আবার বোধগম্যতার মাত্রা কম হলেও লক্ষ্য – উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে । তাই মাত্রা যথাযথ হওয়ার প্রেক্ষিতে বিষয়বস্তুর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জিত হবে । এর জন্য মাত্রাজ্ঞান কম হলেও যেমন সমস্যা, বেশী হলেও সীমানার মধ্যে থাকে না।
রাস্তায় হাঁটবেন ? সেখানেও আপনাকে মাত্রাজ্ঞান রাখতে হবে । গাড়ী চালাবেন ? সেখানে মাত্রাজ্ঞান কমবেশী হলে আপনাকে হয় গন্তব্যের অনেক কিছুই হারাতে হতে পারে, অথবা জীবনে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে ।
সমাজ-সংসার-সম্পর্ক সবকিছুতেই মাত্রাজ্ঞান একটা বিরাট বিষয়। কথা বলবেন ? সেখানে মাত্রা কমবেশী করা যাবে না। মাত্রা হলো অকেটা তরকারিতে লবণ-মিশ্রণের মত । বেশী হলে যেমন অখাদ্য হয়, কম হলেও তেমনি বিস্বাদ পরিলক্ষিত হয় । তরকারিতে বা খাদ্যে লবণ যেমন যথাযথ হওয়া বাঞ্চনীয়, কথা-বার্তা, আচার-আচরণ, চলন-বলন সবকিছুতেই মাত্রাজ্ঞান একেবারে সঠিক হওয়া অপরিহার্য ।
কথার ঝাঁঝ যদি বেশী হয় ভ্রদ্রতার মাত্রা সেখানে অনেকটাই মুখথুবড়ে পড়বে । আর ঝাঁঝহীন, ত্যাজহীন, দীপ্তিহীন ভাষা বা কথাও তেমনি দর্শকশ্রুতাকে তেমন আকৃষ্ট করতে পারে না। তাই, কথা বলার ক্ষেত্রে যেমন অধিক ঝাঁঝ এবং ত্যাজ পরিহার্য, তেমনি শ্রুতাকে আকৃষ্ট করার উপদানযুক্ত ভাষা বা কথার প্রতিও যথেষ্ট খেয়াল রাখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আচরণের ক্ষেত্রেও যথাযথ মাত্রাজ্ঞান ব্যক্তিকে যেমন তার ব্যক্তিত্বের দিক থেকে মানোত্তীর্ণ করে, তেমনি মাত্রার আধিক্য বা ঘাটতি তাকে খুব বেশী ঔদ্ধত্য বা হালকা মনে হতে পারে । ঔদ্ধত্য যেমন সমাজজীবনে পছন্দনীয় নয়, তেমনী হালকা স্বভাব ও পছন্দের তালিকার বাইরেই থাকে।
চিন্তার ক্ষেত্রেও যদি যথাযথমাত্রা অনুসরণ করা না হয়, তাহলে চিন্তার ক্ষেত্রকে যেমন অতিক্রম করতে পারে, তেমনি চিন্তার সীমানায় প্রবেশ করাটাও কঠিন মনে হতে পারে । তাই, সেক্ষেত্রেও চিন্তার যথাযথমাত্রা প্রয়োগ অপরিহার্য ।
প্রিয়জনের সাথে কথা বলবেন, লিখবেন ? তাকে সুন্দর সুন্দর বাক্য রচনার মাধ্যমে ভাব বিনিময় করবেন ? সেখানেও মাত্রজ্ঞান যথাযথভাবে অনুসরণ করা বাঞ্চনীয় । কথায় যেমন যথাযথ শব্দের গাঁথুনী থাকবে, তেমনী মনোরঞ্জনের জন্য রসের উপাদানও যোগান দিতে হবে একই সাথে । আবার লেখার ক্ষেত্রে ও বাক্যগঠনের দিকে নজর দেয়ার সাথে সাথে প্রিয় মানুষটির মনোজগতে এর প্রতিক্রিয়া কতটুকু হবে সে সম্পর্কেও মাত্রাজ্ঞান থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। তা না হলে কথা, কথাই থেকে যাবে, কিম্বা লেখা, সেটা শব্দও বাক্যের মেলবন্ধন হিসেবে দ্যোতি ছড়াবে ঠিকই, কিন্তু সম্পর্কের স্থায়ীত্বে কুঠারাঘাট করা হবে নিশ্চিতভাবে।
এতে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ হবে, তা বন্ধ করার জন্য আর তেমন শব্দ বা কথা তাৎক্ষণিকভাবে খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন হয়ে যাবে। তাই, লিখিত অথবা মৌখিক সব ভাষায় মাত্রাজ্ঞান ব্যক্তিকে সুন্দর ব্যক্তিত্বে পরিণত করবে , সম্পর্ককে আরো বেশী গভীরতা ও স্থায়ীত্ব দান করে ।
তাই, জীবনের সকল জায়গায় মাত্রাজ্ঞান রাখাটা অত্যন্ত জরুরী। না হলে সমাজ-সংসার, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজন সবাই এর সুফল বা কুফল ভোগ করবে, ব্যক্তিজীবন ও সেখান থেকে বাদ যাবে না। এজন্য, চলা-বলা-লেখা-চিন্তা-চেতনা সব জায়গায় মাত্রা বিপর্যয় হলে চলে না ।
মাত্রাজ্ঞানের চমৎকার সৌকর্য মানুষের জীবনকে আরো বেশী সুন্দর ও সফল করে তোলতে পারে । সকল ধরনের যোগাযোগে মাত্রাজ্ঞান রক্ষিত হোক অপরিহার্যভাবে, সেটাই সকলের চাওয়া হওয়া উচিত ।
শিক্ষার আলোর ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।
লেখক:
মোহাম্মদ জাহির মিয়া তালুকদার
ইন্সট্রাক্টর, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার
বানিয়াচং, হবিগঞ্জ।
Posted ৮:২৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০২১
শিক্ষার আলো ডট কম | শিক্ষার আলো
আর্কাইভ
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৭ | |
৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১ | ১৩ | ৪ |
১৫ | ১৬ | ১ | ৮ | ১৯ | ২০ | ২১ |
২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২ |
৯ | ৩০ | ৩১ |