
মোহাম্মদ জাহির মিয়া তালুকদার | শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১ | প্রিন্ট
মোহাম্মদ জাহির মিয়া তালুকদার
ছাত্রজীবনে বাংলাদেশ বেতারের প্রতি আমার প্রচন্ড রকমের আশক্তি ছিল। মাধ্যমিকের গন্ডি পার হওয়ার পরপরই আমার এ আশক্তি জন্ম নেয়। তার আগে রেডিও এর প্রতি আকর্ষণ থাকলেও বাবা মায়ের কাছে চাওয়ার মত সাহস ছিল না । গ্রাম বাংলার একমাত্র বিনোদনের উপায় ছিল রেডিও । সামর্থবান যারা, তারা আবার টেপরেকর্ডার কিনে বাজার থেকে শিল্পীদের গানের ক্যাসেট সংগ্রহ করে বাজাতেন । তখন বিদ্যুতায়ন শহর বা তার আশে পাশে থাকলেও গ্রামে খুব একটা এর সুবিধা পাওয়া যেত না। তাই টেপরেকর্ডার বা রেডিও ওয়ানটাইম ব্যাটারি ব্যবহার করে বাজানো হত ।
মাধ্যমিক পাশ করার পর আমার মা আমাকে একটা রেডিও কিনার টাকা দিলে বাজার থেকে নরমাল একটা রেডিও কিনে বাজানো শুরু করি । কলেজে এর লম্বা ছুটি হলে গ্রামের বাড়িতে যখন আসতাম তখন ও রেডিও সাথেই থাকতো । তারও আগে দেখতাম রেডিওকে লোকজন হাতদিয়ে বুকের পাশে ধরে রেখে হাঁটতে হাঁটতে বাজিয়ে যেত । বাড়িতে গেলে মাঝে মাঝে আমিও ঠিক একইভাবে রেডিও টা কে কূলে করে হাঁটতে হাঁটতে বেড়াতে যেতাম আর লোকজন কেমন সুখ পায় তা অনুভব করতাম । আমারো বেশ ভালই লাগতো । রাতের নিশোতি অনুষ্ঠান শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম ।
বাংলাদেশ বেতার হচ্ছে গানের একটা অসাধারণ ভান্ডার । যত গান বেতার থেকে শোনেছি এর বাইরে গানের উৎস বা শোনার সুযোগ খুব একটা ছিল না। এখন তো অনেক ধরনের সুযোগ সুবিধা রয়েছে । ইউটিউব সহ বিভিন্ন ওয়েবসাইট রয়েছে যা থেকে যে কেউ পছন্দের গান সুবিধাজনক সময়ে শোনতে পারেন। তখন এ সুযোগটা ছিল না । বাংলাদেশ বেতার এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন ছিল বিনোদনের একমাত্র উপায় । নাটক দেখা বা শোনার জন্যও বাংলাদেশ বেতার (তখন রেডিও বাংলাদেশ ছিল ) এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন ছিল একমাত্র ভরসা ।
আজকাল টেলিভিশ চ্যানেলের যেমন অভাব নাই, তেমনি বেতার বা এফএম রেডিও এর ও কোন কমতি নেই । বেতার নাটকের প্রতি আমার প্রচন্ড নেশা ছিল। প্রতি সপ্তাহে ঢাকা বেতার কেন্দ্র এবং সিলেট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারিত নাটক শোনার জন্য মুখিয়ে থাকতাম ।
একবার নাট্যকার অরুণ চৌধুরী রচিত একটি বেতার নাটক এর অভিনয় শোনছিলাম । নাটকের চরিত্র গুলোর মুখের সংলাপ এবং পুরো নাটকের ঘটনা বা নাটকীয়তা মনের মধ্যে ভীষণভাবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল । একটা মানুষ স্বাভাবিক কথাবার্তা বললেও কোথায় যেন খেই হারিয়ে ফেলে, কোথায় যেন একটা সমস্যার আবর্তে নিজেকে বন্দি করে ফেলে।
নাটকের মূল চরিত্র একটা মেয়ে । তাকে তার মামা তার এক বন্ধুর বাসায় রেখে যায় । সেখানে একই বাসার এক ছেলের সাথে সে মিশতে শুরু করে। বেশ ভাল ভাল কথা বলে, প্রচন্ড হাসিখুশি থাকে। জমিয়ে আড্ডা দিতে বেশ স্বাচ্ছন্দ বোধ করে । শৈশবের কথা বলতে মেয়েটা খুব বেশী আনন্দ পায় । ছেলেটার সাথে তার সম্পর্ক গভীর হওয়ার কাছাকাছি পর্যায়ে চলে যায় । একপর্যায়ে ছেলেটা যখন মেয়েটির মতামত জানতে চায়, তখন মেয়েটা প্রচন্ডরকমের ক্ষেপে যায় এবং উত্তর দেয়ার জন্য সময় চায় । যদিও এভাবে ক্ষেপে যাওয়ার সুনির্দিষ্ট কোন কারণ নেই । এপ্রসঙ্গ ছাড়াও স্বাভাবিক কথা বলতে গিয়ে মেয়েটি বিনা করণে চিৎকার চেঁচামেচি করে । একেবারে খাপছাড়া রকমের ক্ষেপে যায় । ছেলেটা এ ধরনের আচরণের কোন কারণই খুঁজে পায় না । বেশ কয়েক বার মেয়েটির এরকম খাপছাড়া আচরণে ছেলেটি কষ্ট পায়, অবাক হয় । কিন্তু এর কারণ টা কোন ভাবেই উদঘাটন করতে পারে না ।
এভাবে বেশ কিছুদিন যাওয়ার পর যখন মেয়েটির মামা আবার তাকে ফিরিয়ে নেয়ার জন্য আসল, তখন প্রকৃত ঘটনা জানা গেল । মামা তার বন্ধুর কাছে জানতে চান যে , মেয়েটি তাদেরকে খুব জালিয়েছে কি না । সব ঠিক থাকলেও মেয়েটির হঠাৎ রেগে যাওয়ার কোন কারণই তারা খুঁজে না পাওয়ার কথা জানান । মামা তখন বললেন, মুক্তি যুদ্ধ চলাকালীন মেয়েটির উপর যে পাশবিকতা নির্যাতন চালানো হয়েছিল তার প্রেক্ষিতে সে অনেকটা মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন হয়ে আছে। দেখতে স্বাভাবিক এবং হাসিখুশি হলেও সত্যিকার অর্থে মেয়েটি মানসিক ভারসাম্যহীন । অত্যাচার আর প্রচন্ড মানসিক আঘাতের প্রেক্ষিতে সে আজ অসংলগ্ন আচরণ করছে ।
সমাজে এমন অনেক লোক রয়েছে কথা বার্তা এবং আচার আচরণে চমৎকার মানুষ । কিন্তু হঠাৎ দেখা যাবে বিনাকারণে প্রচন্ডভাবে রেগে গিয়ে সব লন্ডভন্ড করে ফেলে । এরকম আচরণের পিছনে নিশ্চয়ই যথেষ্ট কারণ ও রয়েছে, যা সাধারণের চোখে ধরা পড়ে না । তাই , শিশু-কিশোর, যুবক-যুবতী যে কোন পর্যায়ের নরনারী হোক তাদের অস্বাভাবিক আচরণের পিছনে যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণ রয়েছে যা আমরা জানি না বা আমাদের জানার বাইরে ।
আজকাল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেল এবং এফএম রেডিও এর ভিড়ে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রোগ্রাম খুব একটা দর্শক-শ্রুতার নাগালের মধ্যে পৌঁছাতে পারে না। এর জন্য সুস্থ বিনোদন এবং মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান উপভোগ করার সুযোগ থেকে দর্শক-শ্রুতাগণ অনেকাংশেই বঞ্চিত হচ্ছেন । দর্শক-শ্রুতাকে আকৃষ্ট করার জন্য বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনকে দর্শকের নাগালের মধ্যে নিয়ে আশার জন্য ফেইসবুকে , টুইটারে, ইউটিউবে সকল অনুষ্ঠান লাইভ সম্প্রচারের ব্যবস্থা করা উচিত । তাহলেই রাষ্ট্রপরিচালিত এ দুটি গণ মাধ্যম স্বগৌরবে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।
————————————————————————————————————————–
শিক্ষার আলোর ইউটিউব চ্যানেল SUBSCRIBE করতে ক্লিক করুন।
লেখক :
মোহাম্মদ জাহির মিয়া তালুকদার
ইন্সট্রাক্টর, উপজেলা রিসোর্স সেন্টার
বানিয়াচং, হবিগঞ্জ।
Posted ১১:৫০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১
শিক্ষার আলো ডট কম | শিক্ষার আলো
আর্কাইভ
শনি | রবি | সোম | মঙ্গল | বুধ | বৃহ | শুক্র |
---|---|---|---|---|---|---|
১ | ২ | ৩ | ৪ | ৫ | ৭ | |
৮ | ৯ | ১০ | ১১ | ১ | ১৩ | ৪ |
১৫ | ১৬ | ১ | ৮ | ১৯ | ২০ | ২১ |
২২ | ২৩ | ২৪ | ২৫ | ২৬ | ২৭ | ২ |
৯ | ৩০ | ৩১ |