| বুধবার, ০২ জুন ২০২১ | প্রিন্ট
ভাষায় একটি বহুল প্রচলিত প্রবাদ হলো, সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে, প্রবাদটি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়। কারণ প্রবাদটিতে সংসারের অশান্তির জন্য পরোক্ষভাবে নারীকেই দায়ী করা হয়েছে। ইদানিং বেশ কিছু কবি-সাহিত্যিকদের এর পরে আরো একটি লাইন ব্যবহার করতে দেখা যায়। তা হলো, গুনবানপতি যদি থাকে তার সনে সত্যিই তো সংসারতো শুধু রমনীর নয় বরং পতি ও রমনী দুজনেরই। অর্থাৎ সংসারে সুখ বলি বা অশান্তি বলি উভয়েরই জন্য নারী পুরুষ উভয়ই এর অংশীদার বা দায়ী। তবে এই লাইনটি বেশি জনপ্রিয়তা পায়নি। কারণ চিরায়িত পুরুষতান্ত্রিক সমাজে পুরুষরা নিজেদের স্বার্থে আঘাত করে এমন কিছু প্রচার করবে কেন!
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, বর্তমানে প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে ৭ দশমিক ৬ শতাংশ নারী আছেন। তবে উপসচিব থেকে সচিব পর্যায়ে নারীর সংখ্যা এক শতাংশ বা তারও কম। দেশে সরকারি ও আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১০ লাখ ৯৬ হাজার ৩৩৪টি। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৮৩ হাজার। অর্থনীতিতে দিন দিন নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। বিবিএস-এর সর্বশেষ (২০১৬) জরিপ মতে, দেশে ৫ কোটি ৩১ লাখ কর্মজীবীর মধ্যে ১ কোটি ৬২ লাখ নারী। প্রবাসে বিভিন্ন পেশায় কর্মরত ৭৬ লাখ প্রবাসীর মধ্যে মাত্র ৮২ হাজার ৫৫৮জন নারী। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত পোশাক শিল্পে ৫ হাজারেরও অধিক কারখানায় ১৫ লাখ শ্রমিক কর্মরত। যার ৮৫ শতাংশ নারী। তবে এই পোশাক শ্রমিকরা কর্মক্ষেত্র, রাস্তায় বিভিন্ন ধরনের হয়রানির শিকার হন। সঙ্গে আছে কর্মক্ষেত্রে অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি। জাতীয় শ্রমশক্তি জরিপ মতে, দেশে নারী শ্রমিকের সংখ্যা সাড়ে ৮ লাখ, তবে সবাই মজুরি বৈষ্যমের শিকার। গ্রামাঞ্চলে পুরুষ শ্রমিক দৈনিক মজুরি ১৮৪ টাকা পেলে, নারী শ্রমিক পান ১৭০ টাকা। ইউএনএফপিএ’র ২০১৬ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি শহরে কাজে আসছে। ঢাকা শহরে এই হার ১০০জন পুরুষের বিপরীতে ১৬৭জন, সেখানে চট্টগ্রামে এই হার ১৬৬ জন।
জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯১ সালে ১৭৯ জন নারী শ্রমিক বিদেশে পাঠানোর মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২০১৬ সালের ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জনশক্তি রপ্তানিতে গত আট বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এ পর্যন্ত মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে নারী শ্রমিক গেছেন ৭ লাখ ৪৯ হাজার ২৪৯ জন । তবে এসব দেশ থেকে ফেরত আসা শ্রমিকরা দূতাবাসের অসহযোগিতাসহ নানা অভিযোগ করেছেন। বিশেষজ্ঞরা যা বলেন: রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক রওনক জাহান বলেছেন, গতানুগতিকতার বাইরে এসে নারীরা কাজ করছে। তবে তাদের উচ্চ পর্যায়ে না যাওয়ার প্রধান কারণ পুরুষরা শুরু থেকে কাজ করছেন। তিনি বলেন, নারীরা বিভিন্ন র্যাঙ্কে কাজ করুক -এটা শুধু চাইলেই হবে না এজন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। অনেক দেশে আছে, যে সেক্টরে নারী ভাল করছে সে সেক্টর থেকে দক্ষ নারী এনে অন্য সেক্টরে ভারসাম্য তৈরি করা হয়। আমাদের দেশে শিক্ষা ক্ষেত্রে নারীরা ভাল করছে, শিক্ষা ক্ষেত্র থেকে প্রতি বছরই কিছু নারীকে প্রশাসনের যে সকল জায়গায় নারী নেই সেখানে নিয়োগ দেওয়া যেতে পারে।
নারীরা ঘর থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে তার নিজ যোগ্যতার বলেই এগিয়ে আছে। নারীকে ছোট বা খাটো করে দেখার কিছু নেই। নারীদেরও পুরুষের মতো সমান মেধা, জ্ঞান ও চেষ্টা রয়েছে।আমি বিশ্বাস করি বছরের মাত্র একটি দিন নয়, প্রতিটি দিনই নারীর, প্রতিটি দিনই পুরুষের। নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারী অনেক এগিয়ে, আবার কোনো ক্ষেত্রে পুরুষ এগিয়ে। মানুষ হিসেবে উভয়েই সমান মর্যাদা, সম্মান ও শ্রদ্ধার যোগ্য।
নারীরা তার নিজ যোগ্যতার বলে ভালো অবস্থান তৈরি করে নিতে পারে। তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পরিবেশ তৈরি করতে পরিবার থেকে শুরু করে সবার সহযোগিতার প্রয়োজন রয়েছে। একজন কর্মজীবী নারীকে ঘর ও অফিস একসঙ্গে সামলানো অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এ ক্ষেত্রে পরিবারের যেসব পুরুষ বা অন্যান্য সদস্য রয়েছেন, তাদের উচিত কর্মজীবী নারীর পাশে দাঁড়ানো, তার ঘরের কাজে একটু সহযোগিতা করা।
লেখক: রেহানা পারভীন, লেখক ও শিক্ষক।
আমাদের ফেসবুক পেজ ভিজিট করুন : https://web.facebook.com/shiksharalo.official/। বেশি বেশি লাইক ও শেয়ার করে সকলকে দেখার সুযোগ করে দিন।
ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল : https://www.youtube.com/channel/UCjYWHfop40H6KomW0ozTmuw
দেখুন করোনাযোদ্ধা শিক্ষকদের ক্লাস, সংবাদ ও শিক্ষার আলো ডট কমের লাইভ অনুষ্ঠান।
Posted ৫:১২ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০২ জুন ২০২১
শিক্ষার আলো ডট কম | ডেস্ক এডিটর