মোহাম্মদ শাহজামান শুভ | শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৪ | প্রিন্ট
একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা ও মান নির্ভর করে তার নেতৃত্বের উপর। একজন ভালো প্রতিষ্ঠান প্রধান যেমন সারা প্রতিষ্ঠানের কর্মধারাকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে পারেন, তেমনই দুর্নীতি বা অযোগ্যতার কারণে প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছাতে পারে। বর্তমানে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রধান ও সহকারী প্রধান নিয়োগের ক্ষেত্রে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হচ্ছে, তা শিক্ষার মানোন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখানে প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সহকারী প্রধান নিয়োগ হয় স্থানীয় কমিটির মাধ্যমে, যা প্রায়শই স্বচ্ছতার অভাবে নানা রকম অনিয়মের জন্ম দিচ্ছে।
দুর্নীতি ও ঘুষের ভয়াবহ চিত্র
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছে যে, প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ঘুষ লেনদেনের হার ক্রমাগত বাড়ছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে যে, একটি প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ পেতে কমপক্ষে ৮-১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। মুদ্রাস্ফীতির কারণে এই অঙ্ক আরও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে কোনো ব্যক্তি যখন অর্থের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব নেন, তখন তার প্রথম লক্ষ্যই হয় সেই বিনিয়োগের সুদে আসলে ফেরত পাওয়ার ধান্দা করা। শিক্ষার মানোন্নয়নের পরিবর্তে অর্থ উপার্জনের এই মানসিকতা পুরো শিক্ষাব্যবস্থাকে নিচের দিকে টেনে নামাচ্ছে।
রাজনৈতিক প্রভাব ও কমিটির অনিয়ম
রাজনৈতিক প্রভাব শিক্ষার ক্ষেত্রেও ব্যাপকভাবে বিস্তার লাভ করেছে। স্থানীয় সাংসদেরা প্রথমে তাদের দলীয় লোক দিয়ে পরিচালনা কমিটি গঠন করেন, এরপর সেই কমিটি কর্তৃক ঘুষের বিনিময়ে এবং দলীয় পরিচয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান নিয়োগ করা হয়। অনেক উপজেলায় দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠান প্রধান হতে হলে প্রার্থীকে সেই উপজেলার ভোটার বা বাসিন্দা হতে হবে, নতুবা তার আবেদন বাতিল করা হয়। এমনও নজির আছে যেখানে পরীক্ষায় ১২তম স্থানে থাকা প্রার্থীকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র ঘুষের মাধ্যমে।
নতুন প্রস্তাবিত নিয়োগ প্রক্রিয়া
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই দুর্নীতি ও রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত করতে একটি সুষ্ঠু এবং স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রণয়ন করা জরুরি। এজন্য এনটিআরসিএ (NTRCA)-এর অধীনে সহকারী প্রধান হওয়ার জন্য শিক্ষকতার ১০ বছর পূর্তিতে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের বিধান রাখা উচিত। সহকারী প্রধানগণ যারা প্রতিষ্ঠান প্রধান হতে ইচ্ছুক, তাদের পরবর্তি পাঁচ বছর পর প্রতিযোগিতামূলক নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ থাকা প্রয়োজন। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত প্রার্থীদের জেলা পর্যায়ের ডিডি অফিসের মাধ্যমে পদায়ন করা উচিত এবং কমিটির মাধ্যমে নিয়োগের প্রথা চিরতরে বন্ধ করে দেয়া উচিত।
এই পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যোগ্য এবং দক্ষ নেতৃত্ব পাবে, যা শিক্ষার মানোন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখবে। বর্তমান সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে এই একটি পরিবর্তন এনেও ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি দৃশ্যমান সুফল রেখে যেতে পারে।
লেখক: মোহাম্মদ শাহজামান শুভ
সিনিয়র শিক্ষক
বাতাকান্দি সরকার সাহেব আলি আবুল হোসেন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়,
তিতাস, কুমিল্লা
[বি.দ্র: মতামতটি একান্তই লেখকের, যা হুবুহু প্রকাশিত হলো। এই লেখার সাথে পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পর্ক নেই]
লেখা পাঠান আমাদের নিকট : shiksharalo.news@gmail.com
লিখুন শিক্ষা বিষয়ক সংবাদ, ফিচার, কলাম, মতামত। পাঠিয়ে দিন উপরোক্ত পত্রিকার মেইলে। লেখার শেষে মোবাইল নম্বর ও ছবি পাঠাতে ভুলবেন না , ধন্যবাদ…………………………….
ফলো করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ : শিক্ষার আলো ডট কম
ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল : Shikshar Alo
Posted ৩:১৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২৪ আগস্ট ২০২৪
শিক্ষার আলো ডট কম | শিক্ষার আলো