মোঃ উজির আলী | শুক্রবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৩ | প্রিন্ট
একটি ত্রিভুজের যেমন তিনটি বাহু,তেমনি একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অর্থাৎ বিদ্যালয়ের ও তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বাহু রয়েছে। সেগুলো হলো শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও অভিভাবক।শিক্ষকতা কোনো চাকুরি নয় মূলত এটি একটি সেবা। আর শিক্ষক হলেন সেবক।
প্রতিটি পেশারই দায়িত্ব, কর্তব্য ও উদ্দেশ্য ভিন্ন থাকে। আমরা যদি সাধারণভাবে বলি, যিনি একদিনের জন্যও কোনো বিষয়ের শিক্ষা প্রদান করেছেন, তিনিই শিক্ষক। শিক্ষক হচ্ছেন সেই ব্যক্তি, যিনি সৎ,সদালাপী, ধৈর্যশীল, পরমতসহিষ্ণু, পরিশ্রমী, বিনয়ী, যার মধ্যে পরামর্শক হওয়ার যোগ্যতা রয়েছে। একজন শিক্ষক অবশ্যই সৎ ও নৈতিক চরিত্রের অধিকারী হবেন।শিক্ষকতা পেশায় থেকেও নানা অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িয়ে পড়ছেন শিক্ষকগণ আর এ জন্য শিক্ষক সমাজের প্রতি সাধারণ মানুষের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। কোনো কোনো শিক্ষক শিক্ষাকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে নানা ধরণের অনৈতিক ও শিক্ষা বাণিজ্য শুরু করেছেন। শিক্ষক থাকবেন শিক্ষা বাণিজ্য, কোচিং বাণিজ্য, প্রাইভেট বাণিজ্য, প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ অর্থ ও যেকোন কেলেঙ্কারি মুক্ত।
শিক্ষার দ্বিতীয় মেরু হলো শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীরা নরম কাদা মাটির মতন শিক্ষকগণ তাদের যেভাবে গড়বে, তারা সেভাবে গড়ে উঠবে। শিক্ষার্থী স্কুলে আসবে শিখতে আর শিক্ষক শেখাবে। সকল শিক্ষার্থীদের শেখার সক্ষমতা থাকে। তবে শিক্ষার পরিবেশ, শিক্ষকের আচরণ, অভিভাবকদের মনোভাবের উপর নির্ভর করে সে শিখছে কিনা। তবে শিক্ষার্থীদের শেখানোর কৌশল হিসেবে ক্লাসে বিষয়ভিত্তিক গল্প,গান,ছড়া, অর্থাৎ শিক্ষার্থীদের আনন্দের মাধ্যমে শিখন শেখানোর কাজ করতে হবে। কারণ যে পড়ার মধ্যে আনন্দন নেই, সেই পড়া কোনো পড়া নয়।তাই শিক্ষার্থীদের মনোভব অনুধাবন করেই শিখন শেখানো কাজ করলেই, শিক্ষার্থী পৌছে যাবে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাহু হলো অভিভাবকবৃন্দ। শিক্ষকগণের প্রতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এই গুরুত্বপূর্ণ বাহুটির সন্তুষ্টি খুবই কম। কারণ সম্মানিত অভিভাবকগণ সাধারণত একটু বেশী আবেগপ্রবণ হয়, আর এজন্য তাদের চাওয়াটা ও একটু বেশী, তবে তারা জানে না যে তাদের কারণেই তাদের সন্তানের ক্ষতি হচ্ছে। বর্তমান সময়ে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে শিক্ষক-অভিভাবক সম্পর্ক অমধুর। এর মূল কারণ হলো কোনো কোনো অভিভাবকগণের শিক্ষকগণের চেয়ে বেশি বোঝার চেষ্টা অথবা শিক্ষকগণ অভিভাবকদের সাথে অসদাচরণ করা দুটোই হতে পারে।তবে শিক্ষকগণের উচিত অভিভাবকদের সাথে সবসময় ভালো ব্যবহার করা এবং অভিভাবকগণের উচিত যথাযথ সম্মান বজায় রেখে সন্তানের যে কোনো বিষয়ে শিক্ষকদের সাথে কথা বলা। তবে সন্তানকে যোগ্যা মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে শিক্ষকগণের পাশাপাশি অভিভাবকগণের ও অনেক দায়িত্ব কর্তব্য রয়েছে। অভিভাবকগণ আপনাদের সন্তানদের প্রতি নজর দিতে হবে।
সে কখন স্কুলে যায় এবং স্কুল থেকে কখন বাসায় ফিরে এটা খেয়াল রাখতে হবে, শ্রেণি শিক্ষকের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
আপনার সন্তানকে নিয়মিত স্কুলে পাঠাবেন, কেননা স্কুল শুধু পড়াশোনার জন্য নয়, সামাজিকীকরণ শেখার এটা অন্যতম একটা স্থান।
বিদ্যালয়ের যে কোনো সমস্যা সম্পর্কে জানতে শ্রেণি শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে যোগাযোগ করে এটার সত্যতা যাচাই করবেন।আপনার সন্তানকে Early to bed and early to rise -নীতি অনুসরণ করাবেন। রাতে বাসার পড়া নিশ্চিত করলো কিনা সেটা খেয়াল রাখবেন। আপনি যদি সবসময় বিদ্যালয়ের এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের ত্রুটি ধরার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনার সন্তানের ভুলগুলো আজীবন রয়ে যাবে।
শিক্ষক নিয়ে ছোটবেলায় বাদশা আলমগীর সম্পর্কিত একটি কবিতা আমরা সবাই পড়েছি। শিক্ষকের মর্যাদা দেবার উৎকৃষ্ট উদাহরণ এই কবিতা। একজন বাদশা হয়ে যিনি শিক্ষকের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল এবং শিক্ষকের প্রতি সন্তানের একটু অবহেলাও তিনি মেনে নিতে পারেননি।তাই সকল অভিভাবকগণ শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলে এবং সকল শিক্ষকগণ সেবার মনোভাব নিয়ে যদি তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব -কর্তব্য সঠিকভাবে পালন করেন তবে শিক্ষার্থীরা অনায়সে পৌছো যাবে তাদের সঠিক লক্ষ্যে।
লেখক : মোঃ উজির আলী
প্রধান শিক্ষক, নড়াইল কালেক্টরেট স্কুল, নড়াইল।
[বি.দ্র: মতামতটি একান্তই লেখকের, যা হুবুহু প্রকাশিত হলো। এই লেখার সাথে পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পর্ক নেই]
Posted ৭:৩২ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৩
শিক্ষার আলো ডট কম | শিক্ষার আলো