সোলায়মান হোসেন প্রামাণিক | মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট ২০২৩ | প্রিন্ট
শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার। সেই অধিকার বাস্তবায়নে সাড়ে পাঁচ লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থার শতকরা প্রায় ৯৭% বেসরকারী শিক্ষা । বিভিন্ন বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তির জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশ জন্ম দিলেও তার অবর্তমানে ৯৭% বেসরকারী শিক্ষা আজ বায়ান্ন বছরেও বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তি পায়নি। দেশের সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গেলেও এই সাড়ে পাঁচ লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারীর ভাগ্যে কোন উন্নয়নের ছোয়া লাগেনি। ভাবতে অবাক লাগে এই ডিজিটাল বাংলাদেশেও শিক্ষক-কর্মচারীদের বাড়ী ভাড়া ১০০০ টাকা, চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা এবং ঈদ বোনাস মূল বেতনের শতকরা ২৫%। দীর্ঘদিন ধরেই বেসরকারী শিক্ষকর-কর্মচারীরা সময়ে সময়ে বেসরকারী শিক্ষা জাতীয়করণের জন্য আন্দোলন করে আসছে। অপ্রিয় হলেও সত্য শিক্ষক-কর্মচারী সংগঠনের মধ্যে অনৈক্য থাকায় সেই আন্দোলন আশার মুখ দেখতে পারেনি।
সম্প্রতি ১১ জুলাই থেকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষক সংগঠন বিটিএ নেতৃত্বে মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের আন্দোলন বেশ সাড়া ফেলেছে। এখানে সারা বাংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারী তাদের প্রাণের দাবি বেসরকারী শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ আদায় করতে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেছেন। দীর্ঘ ২২ দিনের আন্দোলন শুধু প্রিন্ট এন্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া নয় শিক্ষা ডিপার্টমেন্ট এর সকল কর্মকর্তা, মাননীয় শিক্ষা মন্ত্রী,মাননীয় শিক্ষা উপমন্ত্রী এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি গোচর হয়েছে। এছাড়া সরকারী সর্ব মহলেও এ আন্দোলন আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ আন্দোলনে আহবায়ক ছিলেন জনাব অধ্যক্ষ বজলুর রহমান এবং প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন অধ্যক্ষ শেখ কাউসার আহম্মেদ। যুগ্ন আহবায়ক অধ্যক্ষ আবুল বাশার হাওলাদার,ড. ইদ্রিস আলী,অধ্যক্ষ মোঃ মঈন উদ্দীন,সাইদুল ইসলাম সেলিম, মোঃ শাহআলম, মোঃ আব্দুল মান্নাফ,ইউসুফ আলী মিয়া শামীম,আঃ হালিম, শাহেদুল ইসলাম, বেনী মাধব দেবনাথ, আফজালুর রশিদ, কার্তিক সরকার,মোস্তফা ভূইয়া। এছাড়া যুগ্ন আহবায়ক ছিলেন জসিম উদ্দিন আহমেদ,মোঃ রফিকুল ইসলাম,আঃ খালেক,জসিম উদ্দিন শিকদার,মোঃ রফিকুল হাসান রাসেল,মেছবাহুল ইসলাম প্রিন্স,আবুল বাশার,রুহুল আমিন,শেখ মোঃ জসিম উদ্দিন,মোঃ আলমগীর হোসেন,দিদার হোসেন,আবুল বাশার নাদিম,মোঃ সোলায়মান প্রামাণিক,আদনান হাবিব।
এছাড়া যারা এ আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছেন তাদের সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এ আন্দোলনের মূল এজেন্ডা ছিল বেসরকারী শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণ ও সরকারী বেসরকারী বৈষম্য দূরীকরণ। দীর্ঘ ২২ দিন আন্দোলনের পর সরকারের সমঝোতায় ও সরকারী বেসরকারী শিক্ষকদের বৈষম্য দূরীকরণের আশ্বাস প্রদান করা হয়। জাতীয়করণের নিমিত্তে দুটি কমিটি করার কথা থাকলেও আজ একমাস অতিক্রান্ত হলেও এখনো সেই কমিটি আলোর মুখ দেখতে পায়নি। অন্যদিকে আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক অধ্যক্ষ শেখ কাউসার আলী সম্প্রতি লক্ষীপুর,নোয়াখালী,ফেনী বিটিএর সম্মেলনে দুটি কমিটি ঘোষনা করার জন্য সরকারের প্রতি জোড় দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি ৫ অক্টোবর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট থেকে সরকারী শিক্ষক-কর্মচারীদের ন্যায় বাড়ী ভাড়া,চিকিৎসা ভাতা উৎসব ভাতার ঘোষনা দিবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সেই সাথে ঐদিনই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মুখ থেকে বেসরকারী শিক্ষা জাতীয়করণের ঘোষনা শোনার জন্য সাড়ে পাঁচ লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারী তাকিয়ে আছেন।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী,
আপনি ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা। আপনি যোগ্য পিতার সুযোগ্য সন্তান ও বিশ্বের নামকরা কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে অন্যতম একজন। আপনার সুদক্ষ নেতৃত্বে বিশ্বের উদীয়মান ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের রোল মডেল। আপনি নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মান করে দেখিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশও পারে বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, কর্ণফুল টানেল, মেট্রোরেলসহ অনেক বড় বড় মেগা প্রকল্প আপনি বাস্তবায়ন করেছেন বিধায় বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দাড়িয়েছে। বিশ্বের নামীদামী প্রধান মন্ত্রীরা যখন অভিবাসীদের আশ্রয় না দিয়ে সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছেন, আপনি ঠিক সেই সময়েই দশ লক্ষ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়ে; আজকে আপনি বিশের বুকে মাদার অব হিউমিনিটি/বিশ্ব মানবতার মা উপাধি পেয়েছেন; যা শুধু বাংলাদেশই নয় সারা বিশ্বের গর্ব।
আপনি যেখানে এত বড় বড় মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন, আপনি যেখানে এত বড় বড় সমস্যা সমাধান করেছেন সেখানে ৫,৫০,০০০ (সাড়ে পাঁচ লক্ষ) এমপিও ভুক্ত শিক্ষক/কর্মচারীর সমস্যা আপনার কাছে তেমন কোন বিষয়ই না। আপনাকে যদি কেউ ভুল বুঝিয়ে থাকে, সেই কথায় কান না দিয়ে আপনি আমাদের এমপিও ভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করে দেন। আমরা সাড়ে পাঁচ লক্ষ শিক্ষক/কর্মচারী রোহিঙ্গা নই, আমরা আপনারই সন্তান। ৫ অক্টোবর হোক শিক্ষক-কর্মচারীদের বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তির দিন, ৫ অক্টোবর হোক বেসরকারী শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের দিন। ৫ অক্টোবর শিক্ষক সমাবেশ সফল হোক এবং ঐ দিন সাড়ে পাঁচ লক্ষ শিক্ষক-কর্মচারী শিক্ষক সমাবেশ থেকে হাসিমুখে ঘরে ফিরুক, এই প্রত্যাশা করি।
লেখক: মোঃ সোলায়মান হোসেন প্রামাণিক,
সাধারণ সম্পাদক,বাংলাদেশ বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৃতীয় শ্রেণি কর্মচারী পরিষদ,
কেন্দ্রীয় কমিটি, ঢাকা।
[বি.দ্র: মতামতটি একান্তই লেখকের, যা হুবুহু প্রকাশিত হলো। এই লেখার সাথে পত্রিকা কর্তৃপক্ষের কোন সম্পর্ক নেই]
লেখা পাঠান আমাদের নিকট : shiksharalo.news@gmail.com
লিখুন শিক্ষা বিষয়ক সংবাদ, ফিচার, কলাম, মতামত। পাঠিয়ে দিন উপরোক্ত পত্রিকার মেইলে। লেখার শেষে মোবাইল নম্বর ও ছবি পাঠাতে ভুলবেন না , ধন্যবাদ…………………………….
ফলো করুন আমাদের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ : শিক্ষার আলো ডট কম
ভিজিট করুন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল : Shikshar Alo
Posted ৭:১২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২২ আগস্ট ২০২৩
শিক্ষার আলো ডট কম | শিক্ষার আলো